আস সিদ্দিক মসজিদ, বারটন, মিশিগান।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
হে মুসলমানগণ! হে মুমিনগণ! রমজান শেষ হচ্ছে এবং আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতা'আলা তাঁর বান্দাদের সাথে খুশি যে তারা রমজানের রোজা রেখেছে। যেখানে নবী করীম ﷺ সহীহ হাদীসে বলেছিলেন, "রোজা আমার (আল্লাহর) জন্য এবং আমি এর প্রতিদান দেব"। তিনি আমাদের রোজাকে আমাদের কাছ থেকে নেন এবং তা ফিরিয়ে দেবেন পুরষ্কারের সাথে। তোমরা নিশ্চয়ই খুশি যে আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতা'আলা তোমাদেরকে রমজান দিয়েছেন। রমজানের শেষ দশ দিনে আল্লাহ তোমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। রমজান শেষ হলে মানুষ কি করে? ঈদের দিন আর তার পরে? কেউ কেউ প্রার্থনা করে, কেউ কেউ হয়তো ঘরে বসে নামাজ আদায় করে। সুন্নাত মু'আক্কাদাহ, ইশরাকের ১ ঘন্টা সময় পরে জোহরের পূর্বে সুন্নাত। নামাজের পরে তারা কি করে? তারা রাস্তায় ঘুরতে যায়, হয়তো এই দেশে না। আর সেখানে এই কফি কাপের চারপাশে বসে মানুষ খাচ্ছে, ধূমপান করছে, কথা বলছে আর এদিক ওদিক দেখছে। নবী করীম ﷺ যা বলেছেন তারা সেটার গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই এটা বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ .. .. অনেক লোকেই বলে, আসুন আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে নিয়ে পিকনিক করার জন্য যাই। তবে তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বুখারী এবং মুসলিম হাদীস শরীফ বলে।
মানুষ অজ্ঞ; ইমাম বুখারী (র) ও ইমাম মুসলিম (র) যা লিখেছেন তা ছাড়াও হাজার হাজার হাদীস রয়েছে, প্রতি মুহূর্তে তিনি ﷺ সাহাবাদের সাথে কথা বলছিলেন। সেখানে অনেক খাঁটি হাদীস রয়েছে। এই হাদিসটি সহিহ মুসলিম থেকে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "রাস্তায় বসে থাকার বিষয়ে সাবধান থাকুন"। লোকেরা বলেছিল: "আমাদের একসাথে বসবার এটাই তো উপায়।" রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যদি আপনাকে সেখানে বসে থাকতেই হয়, তবে বসার উপায়ের অধিকারগুলি পর্যবেক্ষণ করুন"। তারা জিজ্ঞাসা করেছিল, "উপায় কী?" তিনি ﷺ বলেছিলেন, "আপনার দৃষ্টি কম করা (অবৈধ জিনিস না দেখা) এবং (ক্ষতিকারক বিষয়গুলি অপসারণ করা), শুভেচ্ছা প্রত্যাবর্তন করা (সালামের জবাব দেয়া), ভালোর ইঙ্গিত দেওয়া এবং অন্যায়কে নিষেধ করা"।
লিইয়াকুম ওয়আল জুলুসু ফি'ত তুরুকাত। আমি তোমাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি, রাস্তার পাশে কফিশপে বসার ব্যাপারে। তোমরা কি তা করছো? হ্যা, শুধু যে করছি, তাই নয়, আমরা আমাদের এক পা-কে আরেক পায়ের উপরে এইভাবে রেখে সিগারেট খাচ্ছি, অন্যের মুখের উপরে সেই সিগারেটের ধোয়া ফুকে দিচ্ছি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তারা রাস্তার উপরে হুক্কা (শিশা) নিয়ে বসে যায় আর দুনিয়ার সবার সম্বন্ধে গীবত করতে শুরু করে। এটাই কি ঈদের পুরস্কার? সারা মাস রোজা রেখে এখন আমাদেরকে এই কাজ করতে হবে?
রাসুল ﷺ বলছেন আমি তোমাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি যে রাস্তার উপরে বসো না। কিন্তু তারা বলছে, 'ও রাসুল'আল্লাহ ﷺ আমরা সেটা কিভাবে ছেড়ে দেবো, এটা তো আমাদের দেখা সাক্ষাতের একমাত্র উপায়। আমাদেরকে তো বসে একে অপরের বিরুদ্ধে এখানে অভিযোগ অনুযোগ করতে হবে'। দেখো, কত বড় সাহস, কি ভাবে তারা আল্লাহর রাসুল ﷺ এর মুখের উপরে এভাবে কথা বলে। কোথায় তারা বলবে, সামি'না ওয়া আত'আনা, আমরা শুনলাম এবং আমরা মান্য করলাম, তা না করে, তারা বলছে যে তারা সেটা মানতে পারবে না। কাজেই দয়াল নবী (সা) তখন তাদের জন্য একটা উপায় দেখিয়ে দিলেন। কেননা, যদি তিনি নিষেধ করে দিতেন আর তারা না শোনে, তাহলে তাদের জন্য সেটা অনেক কঠিন শাস্তি হয়ে যেত। কাজেই নবী ﷺ বললেন, 'ফা ইজা আবায়াতুম ইল্লা আল মাজলিস ফা'আতু আত-তারিক হাক্কাহ। "তোমাদেরকে যদি এভাবে বসে সাক্ষাৎ করতেই হয়, রাস্তার পাশে বসে চা বা কফি খেতেই হয়, তাহলে রাস্তাকে তার অধিকার দাও।"
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামিয়াহ-র অনেক স্কলার বলেন রেস্টুরেন্টে না বসতে। তোমরা যদি জানালার পাশে বসে থাকো আর একজন ক্ষুধার্ত মানুষ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে আর জানালা দিয়ে সে তোমাদের খাবারের দিকে তাকায়, তখন তার দৃষ্টি থেকে যে নেতিবাচক এনার্জি, ঈর্ষা, বিদ্বেষ জাগবে সেটা তোমাদের খাবার আর পানীয়র ভেতরে গিয়ে পড়বে। তোমরা খাচ্ছো, কিন্তু সে খাচ্ছে না। এই এনার্জি, দ্বেষ তোমাদের উপরেই ঠিকরে গিয়ে পড়ে, আর সেকারনে তোমরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যাও। তারা বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই বাইরে গিয়ে খায়। কেনো? তোমাদের যদি প্রতিদিন ভালো খাবার খাইতেই হয়, তাহলে বাড়িতে একটা বাবুর্চি ভাড়া করো আর না হলে বাইরে থেকে ক্যাটারিং করে খানা নিয়ে আসো। যদি বাইরে থেকে খাবার ক্যাটারিং করে নিয়েই আসো তাহলে জেনে নিও যে, কে সেই খানা রান্না করেছে, সে কি অজু অবস্থায় রান্না করেছে কি না। সেই লোক যদি জুনুব অবস্থায় গোসল না করেই খানা পাকিয়ে থাকে তার মানে সেই খাবার বিষাক্ত। যে রান্না করলো রাগের মাথায়, তার খাবারও বিষাক্ত। যে কিনা চাকরির কারনে বা পয়সা নিয়ে খানা পাকালো কিন্তু তার মনিব বা সেই বাসার মালিক তাকে সেই খাবার খেতে অনুমতি দেয় না, তাহলে সেই খাবারও বিষাক্ত, কেননা সেই খাবারের ভেতরে তার চোখের নজর চলে যাবে। টয়লেটে গিয়ে যে হাত না ধুয়েই রান্না করতে শুরু করে দিলো সেই খাবারও বিষাক্ত। শয়তান চায় না যে আমরা হাত ধুই। আর ওজু তো দূরের কথা। অনেক মুসলমান মনে করে বাথরুম ব্যবহার করলেই আবার ওজু করতে হবে কেন? এটাতো পুরান আমলের কথা বার্তা। ইসলামে আমাদেরকে অনেক আদব কায়দা অনুসরন করতে হয়।
রাসুল ﷺ বলেন, তোমাদের যদি ক্যাফেতে বসতেই হয় তাহলে ফুটপাথকে তার অধিকার দাও। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুল ﷺ, ফুটপাথের আবার অধিকার কি? তিনি ﷺ বললেন, 'ঘাদু'ল বাসার', "তোমাদের দৃষ্টিকে নিচের দিকে রাখো আর গীবত করো না"। এমন কে আছে যে কিনা ফুটপাথের পাশে বসে তাদের দৃষ্টিকে নীচের দিকে ধরে রাখতে পারে? আমরা যখন কোথাও যাই, আমাদের দৃষ্টিও আমাদের সাথে সাথে যায় আর সামনে যা কিছু আমরা দেখি তার নিন্দা করতে থাকি অবিরত। এর অর্থ হলো ফুটপাথের পাশে বসো না। যদি না তোমরা নিজেরা খাঁটি না হও আর মাথা নিচু করে খেতে পারো। কাজেই এটা এমন একটা বিষয় যা তোমাদেরকে মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে। মাথা নীচু করে খাওয়া আর কোন দিকে না তাকানো, এটা হাস্যকর আর অসম্ভব। অর্থাৎ রাসুল ﷺ ইচ্ছা করেই তাদের এই বিষয়টাকে কঠিন করছিলেন।
আজকাল তোমরা দুনিয়ার সবখানেই মানুষকে রাস্তার উপর বসে থাকতে দেখো। তোমাদের দৃষ্টিকে নিচের দিকে রাখো আর কারোর কোন ক্ষতি করো না। মাঝেমধ্যে দুষ্ট ছেলেরা বা মেয়েরা অন্য মানুষকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করতে পছন্দ করে। 'কেন ঐ মেয়েটা উচু হিল জুতা পরেছে?', 'কেনো ঐ লোকটা মাথায় পাগড়ি পরেছে?', 'কেনো ঐ লোকটা দাড়ি রেখেছে?'। তিনি ﷺ বলেছেন মিথ্যা গুজব ছড়িয়ো না আর কারোর ক্ষতি করো না। একে অপরকে সালাম দাও আর সালামের জবাব দাও। সালাম দেয়া নবী ﷺ -র সুন্নাহ। কেউ যদি তোমাকে চেনে তাহলেই শুধু তারা তোমাকে সালাম দেয়। তাই না? তো আমরা কিভাবে জানবো যে কে মুসলিম আর কে মুসলিম না? যদি তোমরা সুন্নাহ কাপড়চোপড় পরো। প্রাচ্যের দেশগুলাতে মসজিদের দরজার পাশে বড় বাক্সে অনেক অনেক টুপি রাখা থাকে, মানুষ নামাজ পড়তে এসে টুপি পরে নেয়, এটা আমাদের রাসুল ﷺ এর সুন্নাহ। আজকাল রাস্তায় কেউ কাউকে দেখে বোঝার কোন উপায় নাই যে, কে মুসলিম। আমি শ্রীলংকায় দেখেছি প্লাস্টিক টুপি, নারকেলের টুপি, আমের টুপি, আপেলের টুপি, কত ধরনের টুপি। সেগুলোর থেকে সুন্দর গন্ধ বের হয়। কে মুসলিম সেটা যদি নাই জানবে তো সালাম দিবা কিভাবে?
ভালোর দিকে আহ্বান করা আর মন্দ থেকে দূরে থাকা, অর্থাৎ তোমার নিজের খারাপ ইচ্ছা গুলাকে জানা আর সেগুলা থেকে নিজেকে বিরত রাখা আর অন্যদেরকে ভালো কাজ করতে আহ্বান করা। আমি এইটা বলেই শেষ করবো।
রাসুল ﷺ বলেছেন, أفضل الجهاد كلمة عدل عند سلطان جائر আফলাতুল জিহাদ। শ্রেষ্ঠ জিহাদ। আজকে তারা এই শব্দটাকে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে ভুল ভাবে। স্কলারেরা একমত হয়েছে আর সনাক্ত করেছে চোদ্দ রকম ভিন্ন জিহাদ। তার মধ্যে শুধুমাত্র একটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বাকি তেরোটিই নিজের বিরুদ্ধে। রাসুল ﷺ বলছেন, 'কালিমাতু 'আদিন 'ইন্দা সুলতানিন জা'ইর। একজন অত্যাচারী শাসকের সামনে একটা সঠিক কথা বলা, ভালো কথা বলা, সত্য কথা বলা, তাকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে সে কত অন্যায় কাজ করছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই জালেম কে? প্রথমে, সেই অত্যাচারী হলো তুমি নিজেই। ঐ ছোট মাংসের টুকরাটা যেখানে শয়তান ঢুকে যায়। অর্থাৎ আল্লাহ্ আর রাসুল ﷺ যা নিষেধ করে গেছেন আমরা সেসব কাজ করে চলেছি। সুতরাং ঐ সব মানুষ যারা কিনা আমাদেরকে আক্রমণ করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে জথাসত্য কথাটা বলতেই হবে।
আল্লাহ্ যাতে আমাদেরকে রাসুল ﷺ আর সাহাবাদের (রা) পথে চলার তৌফিক দেন, আমাদেরকে পুরষ্কার দিন আর আমর আমাদের মেকি রোজাকে আসল রোজাতে পরিনত করে দেন। আমিন।
দ্রস্টব্যঃ হাদীস শরীফের রেফারেন্সঃ
আবু হুরাইরা বর্ণনা করেন:
রাসুল ﷺ বলেন, "আল্লাহ্ সুবহানাহুতা'আলা বলেছেন, 'আদম সন্তানের সমস্ত ভালো কাজের পুন্য তাদের নিজেদের জন্য, শুধুমাত্র রোজা ছাড়া। রোজা আমার জন্য আর আমি নিজেই এর পুরষ্কার দেবো'। অবশ্যই, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মাসক অ্যাম্বার আতরের চাইতেও উত্তম।"
https://sufilive.com/The-Obligations-of-Sitting-in-Coffeeshops-1876.html
© Copyright 2020 Sufilive. All rights reserved. This transcript is protected
by international copyright law. Please attribute Sufilive when sharing it. JazakAllahu khayr.