Available in: English   Bengali   Go to media page

মুহাম্মাদ ﷺ কে?

শায়খ মুহাম্মদ হিশাম কাব্বানী (রহঃ)

মিনহাজুল কুরআন, লন্ডন।

০৩-০৮-২০০৮

এটাই খুশির জন্য যথেষ্ট যে, 'খুশি হও' (মাওলানা কাঁদছেন) খুশি হও যে আল্লাহ আমাদেরকে সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ - এর উম্মত করেছেন। খুশি হও যে আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদেরকে তাঁর বান্দা বলেছেন, যখন তাঁর রাসূল ﷺ, তাঁর প্রিয়তম একজন বলেছেন, "আমি শুধুমাত্র তখনই খুশি হই যখন আল্লাহ আমাকে ‘আমার বান্দা’ বলে ডাকেন।"

যদি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা হিসেবে পরিচয় পেয়ে খুশি হন, তাহলে আমরা কেন হবো না?

হে আল্লাহ, আমরা এখান থেকে আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ-এর উছিলাতে যাকে আপনি রাহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবে পাঠিয়েছেন, আমাদেরকে আপনি ক্ষমা করুন। আমাদের পূর্বপুরুষদের এবং পরবর্তী প্রজন্মদেরও ক্ষমা করুন। সবাইকে জান্নাতে প্রেরণ করুন কারণ তারা সবাই তো আপনার সৃষ্ট বান্দা।

আমরা জানি, হে আল্লাহ, আমাদের ভুলের জন্য আমরা দায়ী, কিন্তু আমরা তো অক্ষম এবং দুর্বল বান্দা। আমরা এটা করতে পারি না। … আমরা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

আলহামদুলিল্লাহ আজ রবিউল আওয়ালের প্রথম দিন এবং আমরা এই অনুষ্ঠানটি উদযাপন করছি। এই অনুষ্ঠানটির অর্থ কী?

আমি দেখছি, ভাবছি এবং বিস্মিত হচ্ছি, কেন আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি?

এর কারণ কী? এটি কি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ-কে ডাকার জন্য, তার জন্মদিন উদযাপন করার জন্য? এটা কি আমাদের ম্যাসেজ তাই, নাকি আমাদের ভালবাসা ? যেমন শায়খ আবু বকর বলেছিলেন, "এটি মুখে বলা সহজ।" এটি সহজ যে আল্লাহ তাঁর নাম সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ-এর নামের সাথে জুড়ে রেখেছেন।

যখন আপনি একটি অনুষ্ঠানে যান, ধরুন প্রাসাদে, আপনাকে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অথবা আপনি একজন রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করতে গেছেন। আপনি কোথাও বসতে পারবেন না। প্রোটোকল রয়েছে যেখানে আপনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সিট রয়েছে এবং সেখানে আপনার নাম রয়েছে। যদি আপনার নাম সেখানে না থাকে তবে আপনার সেখানে বসার অধিকার নেই।

তার মানে ওই চেয়ারটি আপনার জন্য নয়। যদি আপনার নাম সেখানে থাকে তবে সেই স্থানে আপনার অধিকার রয়েছে।

তাহলে যদি আমরা একটু গভীরভাবে চিন্তা করি ও দেখি যে আল্লাহর নামের পাশে সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ-এর নাম রয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এর মানে সেই স্থান সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ-এর। আমরা সেখানে সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ-এর নাম ছাড়া অন্য কোনো নাম খুঁজে পাবো না।

সুতরাং আমরা এটা জানি যে,আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রিয়তমকে সেই মর্যাদা দিচ্ছেন, যিনি সৃষ্টির আগেই নবী ছিলেন। যাঁকে আল্লাহ তাঁর নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন,

সৃষ্টি করেছেন আদম (আঃ) এরও আগে,

তাঁকে তিনি কি নামে ডেকেছেন?

আমরা সবাই জানি যে, তাঁকে ডাকা হয়েছে রাহমাতুল্লিল আলামিন বলে, রাহমাতুল্লিল আলামিন মানে কি?

যখন আপনি একজন উদার ব্যক্তির কাছে যান: একজন প্রভু বা রাজা অথবা রাণী, যখন আপনি তাদের কাছে কিছু চান তারা উদারভাবে আপনাকে সেসব কিছু দিবে যা তাঁরা দিতে পারে। আল্লাহই হচ্ছেন সর্বাধিক উদার। যখন আল্লাহ দিতে চান, তখন তিনি কোনো সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে কিছু দেন না। যখন তিনি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ-কে রহমত করেছেন, তার সুন্দরতম নামগুলোর মধ্য থেকে অন্যতম আর রাহিম ও আর রহমান হতে তখন তিনি তাঁকে তাঁর সেই দয়া দিয়ে পরিপূর্ণ করে সাজিয়েছেন।

এর মানে তিনি তাঁকে সে সব দয়া ও উদারতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব।

এটা মানুষের দয়ার মতো নয়, একজন রাজা বা রাণী হয়তো দান করেন, কিন্তু তাঁরা তাঁদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেই দান করতে পারেন। কিন্তু আল্লাহ যেভাবে যা দান করেন তাঁরা তা পারেন না।

সুতরাং আল্লাহ সাইয়্যেদুনা মুহাম্মাদ ﷺ কে কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই দান করেছেন।

এর অর্থ যা কিছু নবী ﷺ চাইবেন, আল্লাহ তাকে তা দেবেন। এবং নবী ﷺ বলেছেন, “আমি আদম সন্তানদের নেতা এবং আমি এটি গর্ব ছাড়াই বলছি।”

তিনি এর মানে কী বোঝাতে চেয়েছেন? অর্থাৎ, “হে আল্লাহ, তাদের আমাকে দাও...” আপনার কি মনে হয় যে কিয়ামতের দিন নবী (সা.) যদি বলেন, "তাদের আমাকে দাও?" তবে আল্লাহ কি তাকে "না" বলবেন? তবে কিভাবে তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন হবেন? যদি তিনি না দেন, তবে তা পূর্ণ উদারতার মধ্যে হবে না।

সেই আসন নবীর জন্য। এবং জান্নাতের প্রতিটি আসন নবীর।

যখন আদম (আ.) ভুল করেছিলেন এবং নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছিলেন আর তারপর সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ-এর উছিলায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন, আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তুমি মুহাম্মাদ ﷺ সম্পর্কে কী জানো?"

তিনি বলেছিলেন, “হে আল্লাহ, আমি যেদিকে মুখ ফিরিয়েছি, এমনকি আপনি আমাকে যে সমস্ত জান্নাত দিয়েছেন তার প্রতিটি পাতায় মুহাম্মাদ ﷺ নাম দেখছি; আমি জান্নাতের প্রতিটি প্রাচীরে মুহাম্মাদ ﷺ নাম দেখছি; আমি প্রতিটি ছোট পরমাণুতে মুহাম্মাদ ﷺ নাম দেখছি। সেই নাম প্রতিটি পাতায়, প্রতিটি প্রাচীরে, প্রতিটি কণায় লেখা রয়েছে। তাই আমি জানি, হে রব, তিনি আপনার কাছে বিশেষ কিছু; আমাদের জন্য নয়।”

আল্লাহ বললেন, "হে আদম, মুহাম্মাদ ﷺ কে সৃষ্টি না করলে আমি কোনোকিছুই সৃষ্টি করতাম না। আমি তাঁকে আমার সকল সৃষ্টি উৎসর্গ করেছি; তিনি তাদের প্রতি আমার বার্তাবাহক।

এর মানে কি? এই মহাবিশ্বে আমরা বাস করছি, এটি বড় না ছোট? যে বিশাল মহাবিশ্বে আমরা বাস করছি।

এর অর্থ: "হে আদম, আমি সৃষ্টি করেছি তাকে কেন্দ্র (উদ্দেশ্য)করেই।"

আল্লাহ বলেছেন, এবং আমি আগেও উল্লেখ করেছি যে, "وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَكِنْ…" অর্থাৎ, সৃষ্টিতে এমন কিছুই নেই যা আল্লাহর প্রশংসা করে না। প্রতিটি পরমাণু আল্লাহর প্রশংসা করছে আলাদা ভাবে, একই ভাবে নয়; আল্লাহ যে প্রতিটি সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন, জীবন্ত এবং অজৈব, প্রতিটি কোষ মানুষের দেহে - মানবদেহে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন কোষ আছে, এগুলো প্রতি ছয় মাস পরপর সম্পূর্ণরূপে পুনরায় সৃষ্টি হয়। প্রতিটি কোষই তাসবীহ করছে। প্রতিটি অজৈব বস্তু, প্রতিটি পানির ফোঁটা, আল্লাহর প্রশংসা করছে… আমরা তাদের প্রশংসা বুঝতে পারছি না। কে তাদের প্রশংসা বুঝতে পারে?

তিনি হলেন, যিনি তাদের শুনেছিলেন যখন তিনি জাবাল উহুদ এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যখন গাছ এবং কঙ্কর আল্লাহর প্রশংসা করছিল এবং সবকিছু সাইয়্যিদুনা মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রশংসা করছিল। আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন: "إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا।"

আল্লাহ প্রতিটি ফেরেশতাকে সাইয়্যিদুনা মুহাম্মদ (সা.) এর প্রশংসা করতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা প্রতিটি মানবকে নবীর প্রশংসা করতে আদেশ করেছেন।

বিজ্ঞানীরা বলেন, ছয় বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে এবং প্রতিটি গ্যালাক্সিতে ৮০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে। এবং প্রতিটি নক্ষত্র এই সৌরজগতের চেয়ে বড়। মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রশংসা করছে।

মানুষ, খুশি হও, দুঃখিত হয়ো না, খুশি হও। তোমার কাছে যা আসে, শুধু ভালোর জন্য এবং নবীর প্রশংসা কর। তুমি রক্ষা পাবে। তুমি কি মনে করো কেউ আগুনে প্রবেশ করবে? আল্লাহ সবার জন্য শাফায়াত দেবেন যেন সবাই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। তুমি কি মনে কর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাদের পোড়াতে, শাস্তি দিতে বা ধ্বংস করতে? আল্লাহ ন্যায়বিচারক, আল্লাহ দয়ালু। যখন তিনি তাঁর বান্দাদের কাঁদতে এবং ক্ষমা চাইতে দেখবেন, তখন কি তিনি তাদের ক্ষমা করবেন না?

কিসের জন্য? আল্লাহ ন্যায়পরায়ণ, আল্লাহ দয়ালু। তিনি যখন তাঁর বান্দাদের কাঁদতে এবং তাঁর ক্ষমা চাইতে দেখেন, তিনি কি তাদের ক্ষমা করবেন না? আমি শুধু মুসলমানদের কথা বলছি না। কেউ আপত্তি করতে চাইলে, তারা আপত্তি করতে পারে! আমরা চাই সবাই জান্নাতে প্রবেশ করুক। আদম (আ.) থেকে কেয়ামত পর্যন্ত। এটাই ইসলাম। এটাই ইসলামের বার্তা।

আমি মনে করি যে আমরা যথেষ্ট করছি না। আমরা খারাপ বোধ করছি কারণ আমরা যথেষ্ট কিছু করছি না। আমরা খারাপ বোধ করছি, সারা বিশ্বের মুসলমান এবং অমুসলিমরাও খারাপ বোধ করছেন। কেন খারাপ লাগছে? কারণ আমাদের মধ্যে কিছু আছে যা আমাদের ভুলগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

আমরা অপরাধবোধ করছি। হে মুসলমানগণ, এই জীবনের মজা নিন এবং তা করুন নবী সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং অন্যান্য সকল নবীদের অনুসরণ করে।

শেষ করার আগে আমি একটি কথা বলতে চাই। যখন হযরত আদম (আ.) দেখলেন এবং লক্ষ্য করলেন যে গাছের প্রতিটি পাতায় বা আকাশের প্রতিটি কণায় সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম লেখা আছে, তিনি জানতেন এটি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য। তিনি কাঁদতে লাগলেন এবং সিজদায় পড়লেন। তাঁর চোখের পানি প্রবাহিত হয়ে বন্যার মতো হয়ে যাচ্ছিল এবং আল্লাহ তাঁকে চল্লিশ বছর পর্যন্ত সেই অবস্থায় থাকতে দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাঁকে বললেন, “হে আদম, যথেষ্ট হয়েছে, মাথা তুলো।” তিনি বললেন, “হে আল্লাহ, আপনি কি আমাকে ক্ষমা করেছেন?” আল্লাহ বললেন, “হে আদম, অবশ্যই আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি, কিন্তু আমি তোমাকে চল্লিশ বছর কাঁদতে দিয়েছি। কেন? কারণ আমার প্রিয় নবী আমার কাছে সুপারিশ করেছিলেন তোমার মধ্যে থাকা প্রতিটি মানুষের জন্য। সেই সময়ে আদমের জন্য এবং আমি তোমাকে আদমের বংশধরদের সংখ্যার সমান অশ্রু প্রবাহিত করতে দিয়েছি। এবং যখন তা হলো, আমি তোমাকে মাথা তুলতে বললাম।”

আমরা হলাম উম্মতান মারহুমা। আল্লাহ আমাদের আশীর্বাদ করেছেন এবং সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আমাদের উপর দয়া বর্ষণ করেছেন।

তাসাউফে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে কি বর্ণনা দেয়া হয়েছে? আমরা সুফি, সুফি, সুফি সম্পর্কে অনেক শুনেছি এবং আজ সারা বিশ্বে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা জিজ্ঞাসা করছে, এই সুফিবাদ কী।

আমাদের শায়েখগণ, আল্লাহ তাদের দীর্ঘ জীবন দিন, এবং আমাদের সকল শায়েখ, আমি তাদের নাম একে একে বলতে পারছি না, আমাদের সকল শায়েখ, শায়েখ তাহির উল-কাদরি সহ, তারা তাদের ছাত্রদের তাসাউফ শিক্ষা দিচ্ছিলেন।

এটি এমন একটি সংস্কৃতি যা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত চলে আসছে। আজ মানুষ তাদের চোখ খুলেছে এই বিষয়টির দিকে, কারণ অন্যরা যা করছে তা দেখেই আজ তারা এই বিষয়ে নজর দিয়েছে।

তারা বলল, "এখানে একটি সমস্যা আছে।" এবং ইতিমধ্যে শায়েখ আবু বকর এ সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন। তবে আমি একটি কথা বলতে চাই। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে? আমরা কি জানি? আমরা তাঁর কবরের ছবি জানি। আমরা কি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেখেছি? হ্যাঁ বা না? [না] কেন? আপনি কি মনে করেন তিনি এই হলে উপস্থিত নন? আপনি কি মনে করেন, যদি আপনি তাঁকে "ইয়া রাসূলুল্লাহ ইয়া রহমাতান লিল-আলামিন" বলে ডাকেন, তবে তিনি এই হলে উপস্থিত হবেন না? সমস্যা হলো আমরা অন্ধ, আমরা দেখতে পারি না। তিনি অবশ্যই এখানে উপস্থিত। তিনি এখানে আছেন এবং অবশ্যই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। কেন? কারণ, মহান আওলিয়া আল্লাহ যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, সুফি শিক্ষকেরা যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হলেন সৃষ্টির জন্য আয়না। আপনি নিজেকে দেখতে পারেন না আয়না ছাড়া। সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হলেন ঐশ্বরিক উপস্থিতির মধ্যে আয়না, যা আল্লাহ এই পৃথিবীতে যা সৃষ্টি করেছেন তা প্রতিফলিত করে প্রকাশ করেছেন। [নারায়ে তাকবীর… নারায়ে রিসালাহ… আহমদী মোস্তফা মারহাবা, মারহাবা। জানায়ে মোস্তফা নূরে মোস্তফা...]

হে মুসলমানগণ, হে মানব জাতি! আমরা আল্লাহর উপস্থিতির প্রতিফলন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর মাধ্যমে প্রতিফলিত। আমরা এখানেই আছি। এটি আমাদের প্রতিচ্ছবি মাত্র। এটি আমাদের প্রকৃত সত্তা নয়। প্রকৃত সত্তাগুলি এখনও আল্লাহর উপস্থিতিতে রয়ে গেছে। আল্লাহ তা প্রকাশ করেননি। তিনি সেগুলোকে সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আয়নার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন যাতে তা পৃথিবীতে প্রতিফলিত হয়। এ কারণেই সাইয়্যিদিনা মুহিউদ্দিন ইবনে আরাবি এবং অনেক সুফি শিক্ষক, এবং ইমাম গাজ্জালি বলেছেন, আমি অন্ধ নই সেই মুহূর্তটি হলো যখন আমি মারা যাই। তখন আমার চোখ খোলে এবং তখন আমি সত্যকে দেখতে পাই।

মুহিউদ্দিন ইবনে আরাবি বলেছেন, ঐশ্বরিক উপস্থিতি থেকে সবকিছু যা প্রতিফলিত হয়েছে, তা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। যদি সেই আয়না অদৃশ্য হয়ে যায়, তাহলে আপনি এখানে কিছুই দেখতে পারবেন না, এটি সম্পূর্ণরূপে একটি গোপন সম্পদ হিসেবে রয়ে যাবে ঐশ্বরিক উপস্থিতিতে। যা তিনি প্রকাশ করতে চেয়েছেন, তিনি তা মুহাম্মাদের আয়নার মাধ্যমে এই জীবনে প্রতিফলিত করেছেন। যেহেতু আমরা সেই আয়নার প্রতিফলন, তাহলে দায়িত্ব কার? আয়না নাকি প্রতিফলন? আয়নাই দায়িত্বশীল। আমরা শুধু সেই আয়নার ওপর কিছু ফাটল তৈরি করছি।

আপনি কি মনে করেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা, যখন একটি গাড়ির ওপর পাথর এসে পড়ে, আপনি কি কাচ ভেঙে যেতে দেখেন? না, আপনি শুধু ফাটল দেখতে পান। এটি ভাঙে না, কিন্তু ফাটল হয়। সাইয়্যিদিনা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর আয়নায় এমন ফাটলও মেনে নেন না। এ কারণেই আমরা এখনও আল্লাহর উপস্থিতিতে নির্মল আছি। এ কারণেই আওলিয়া আল্লাহ বলেন, আপনি এখনো কিছু দেখেননি। যা আপনি এখনো দেখছেন তা কেবল প্রতিচ্ছবি। অপেক্ষা করুন। অপেক্ষা করুন যতক্ষণ না আপনি এই দুনিয়া ছেড়ে যান। আমরা বলছি, "হে আল্লাহ, আমাদের তাঁর প্রকৃত সত্তা দেখান। আমাদের আখিরাতে একা ছেড়ে দেবেন না। আখিরাতে সবাই তাঁকে দেখতে পাবে। আমরা এখানেই তাঁকে দেখতে চাই। কিন্তু আমরা বলছি, “ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাদের সামনে আসুন। আমরা দুর্বল বান্দা। আমাদের সামনে আসুন, আমাদের অন্তরে আসুন। আপনি আওলিয়া আল্লাহর সামনে এসেছেন। আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের সাথে থাকুন।”

এটাই আমরা চাচ্ছি, হে আল্লাহ, আপনার আওলিয়াগণের জন্য এবং সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদের জন্য আমাদেরকে সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদের উপস্থিতিতে রাখুন আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। আমাদের হৃদয় যেন মুহাম্মদ, মুহাম্মদ, মুহাম্মদ বলে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।

আমাদের শায়েখ মুহাম্মাদ নাজিম আল-হক্কানি থেকে ভালোবাসা এবং আপনাদের সকলের প্রতি এবং শায়েখ তাহির আল-কাদরি এবং এই পবিত্র সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি শুভেচ্ছা।

[নারায়ে তাকবীর…]

https://sufilive.com/Who-is-Muhammad-saw--1057.html

© কপিরাইট ২০২৪ সুফিলাইভ। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ট্রান্সক্রিপ্ট আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইনে সুরক্ষিত। দয়া করে এটি শেয়ার করার সময় সুফিলাইভকে উল্লেখ করুন। জাযাকাল্লাহু খাইর।

UA-984942-2