Available in: English   Bengali   Go to media page

আল্লাহর রাসুল ﷺ এর পবিত্র সাহাবা رضي الله عنه সম্বন্ধে কোন তর্কাতর্কি করি না।

মাওলানা শেখ হিশাম কাব্বানি

২৫ মে, ২০১৯, মিশিগান নকশবন্দী জাওয়াইয়া

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আল-আমীন, ওয়া আস সালাতু ওয়া আস সালামু আলা আশরাফিল মুরসালিন সাইয়িদিনা ওয়া নাবিয়িনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাহবিহি আজমাইন।

আম্মা বা'আদ। ইন্নি আনা গাফুরুর রাহীম? আল্লাহ্‌ নিজেই বলছেন, 'আমার বান্দা যখন কোন পাপ কাজ করে আমি নিজেই তা ক্ষমা করি।'

কাজেই আমরা দোওয়া করি যে, 'ইয়া রাব্বি, আনজিল আলাইনা রাহমাতান মিন ইনদিক, ফাগফিরলানা জুনুবানা মিন খাইর আন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাজী হুয়া শাফিউনা। ওয়া লা আহাদ ইউনকির আলা হাথা-ল-শাই', ওয়া লা আহাদ ইয়াজুন আন্নাহু কালা শাইয়ান আজিমান'।

মানুষ আর জিনদেরকে যদি একত্রে জড়ো করা হতো আর বলা হতো যে আপনারা রাসুল ﷺ এর বাস্তবতা খুঁজে বের করুন, তারা সেই বাস্তবতার ধারে কাছেও আসতে পারতো না। এই দুনিয়ার যে কোন মানুষ যদি চেষ্টা করে নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর বাস্তবতা সম্পর্কে আলোকপাত করতে, তাঁর নূর সম্পর্কে কথা বলতে, আর তাঁর আশেপাশে যারা ছিলেন তাদের বাস্তবতা সম্পর্কে কথা বলতে, এই দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করলেও তারা এর কানা কড়িও একটা অনু পরমাণু পর্যন্ত কোন কিছুতেই পৌছাতে পারবে না। কাজেই আমরা কি বলছি, আমাদের কথাকে নিজেদের মনগড়া কথা দিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করো না। আর আমাদের বিরুদ্ধে তোমাদের ঔদ্ধত্ব দেখিও না। আজকে ইসলামকে যা দেখা যাচ্ছে সেটা সঠিক নয়। পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত পর্যন্ত সঠিক হচ্ছে না। তারা নিজেদের নফসের ইচ্ছা মতো কোরআনকে তর্জমা করছে।

ইবন মা'সুদ رضي الله عنه বলেন, 'সংখ্যাগরিষ্ট-দেরকে অনুসরন করো'। তোমার নফসকে মান্য করো না। আজকে মুসলমানের সংখ্যাগরিষ্টদেরকে সারা দুনিয়াই চেনে। আমরা মুসলমানরা অমুসলিমদের সাথে হাত মেলানোর জন্য সারা দুনিয়াতে দৌড়াদৌড়ি করছি, লাখে লাখে মানুষ। আমরা কোন কিছু নিজেদের থেকে বানাচ্ছি না। আমরা উম্মতের ভেতর থেকে সবচাইতে শ্রেষ্ঠ যারা তাদেরকেই বাছাই করি। যারা রাসুল ﷺ এর উম্মতের মর্যাদাকে উঁচু ও মহিমাময় করার জন্য নিজেদের জীবন দিয়েছেন এবং বাজী রেখেছিলেন তারাই সাহাবা (রাদি'আল্লাহু আনহুম)। বিশেষত তাদের ভেতরে সাইয়িদা ফাতিমা আজ-জাহরা (রাদি আল্লাহু তা'আলা আনহা), সাইয়িদিনা হামজা (রা) আর অন্য সকল মহান সাহাবা (রাদি'আল্লাহু আনহুম)। কাজেই যেই কিনা আহলুল বাইতের অংশ, আমরা সবসময়েই তাদের জন্য খুশি। কেউ যাতে মনে না করে যে আমরা আহলুল বাইতকে ভালোবাসি না। কোন ধরনের কোন গুজবে কান দেবে না।

শুক্রবারে আমি একটা বক্তৃতা শুনলাম। এক লোক যে কিনা তরুন আর বাচ্চাদেরকে সাহাবাদের জীবন নিয়ে শিক্ষা দেন, সে কথা বলছিলো। সাহাবাদেরকে মনে করিয়ে দিতে হতো না যে, যে কোন বিষয়ে যে কোন পরিস্থিতির সুরাহার জন্য তাদেরকে রাসুল ﷺ এর কাছে যেতে হবে। তারা সবসময়েই যেতেন। সাহাবা (রা) দের ভেতরে সমস্যা ছিলো, কিন্তু সেটা নিয়ে আমরা কোন তর্কাতর্কি করি না। গতকাল লন্ডনে আহমাদ জাকী এই বিষয় নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে সাহাবাদের (রা) ভেতরে অনেকেই সঠিক ছিলেন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহুওয়াতা'আলা তাদের উপরে খুশি থাকুন, তাদের মুখমণ্ডলকে উজ্জ্বলতর করুন, আল্লাহর শান্তি তাদের উপরে বর্ষিত হোক। আল্লাহর মনোনীত এই ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারাই কথা বলেছেন, চিন্তা করেছেন, সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আমরা কোন দলাদলি করি না, পক্ষপাতিত্ব করি না। আল্লাহর রাসুল ﷺ এর মহিমাম্বিত শক্তিই আমাদের সমর্থন এবং ভরসা। কেউ এটা নিয়ে কোন মতান্তর করতে পারে না।

রাসুল ﷺ যেভাবে আল্লাহর মাধ্যমে সমর্থিত, আমরাও ঠিক সেভাবে রাসুল ﷺ এর দুই হাতের ভেতরে দাড়িয়ে আছি। তাঁর সাহাবা (রা) দের জন্য উম্মতের ভালোবাসাই আমাদের শক্তি। সাহাবা (রা) দের ভেতরে যদি কোন মতভেদ হয়ে থাকে, সেখান থেকে তোমাদের যা পছন্দ হয় তোমরা নিতে পারো, যা কিছু অপছন্দ তা রেখে দাও। সেটা নিয়ে তোমরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছো কেন? এই মারামারির শুরু কোথায় আর শেষ কোথায়? এই মতভেদের শেষ যদি উম্মতের ভেতরেই থেকে থাকে, তাহলে সেই মতভেদের অবসান হবে তাঁর ﷺ উম্মতের অবসান। আর উম্মতের অবসান তো শয়তানের বিজয়। সেটা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হয়? উম্মতের বিজয় হলো ইসলামের বিজয়। হাতে গোনা বিশজন, তিরিশজন, পঞ্চাশজন মানুষ রাসুল ﷺ এর বাস্তবতা নিয়ে কথা বলছেন। আর তারা যা বলছেন তাঁর বেশির ভাগই মিথ্যা। আমরা এ নিয়ে কিছুই বলি না। আমরা কোন সমস্যা তৈরি করি না।

ইয়া ইবাদ'আল্লাহ, আল্লাহর বান্দারা, নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলো, বিবাদ করো না, মিল করো। এই দুনিয়াতে বিবাদ করার মত কিছুই নাই। এক দিন, সেটা ২০ বছরই হোক, কি ৩০ বছরই হোক, কি ৫৫ বছরই হোক, কি ১০০ বছর, কেউই এই দুনিয়ায় থাকবে না।

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদ, অয়া আলা আলিহি সাইয়িদিনা মুহাম্মাদ।

ফাতিহা।

[মাওলানা আবার বলছেন। ]

গতকাল রাত্রে আমি মাওলানা শেখ নাজিমকে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি দূর থেকে আসছেন আর বলছেন, 'আমি ফিরে আসছি নিজেকে সমর্থন দেওয়ার জন্য। যেই ক্ষমতা আমি তোমাকে আর শেখ আদনানকে দিয়েছিলাম অতীতে, সেই ক্ষমতা অদূর ভবিষ্যতে যেসব ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে তাঁর জন্য প্রয়োজন হবে।"

আমি তাঁকে সেই ক্ষমতা কি তা নিয়ে কোন প্রশ্ন করি নাই। তবে মাওলানা বরকতে আমি জানি তিনি কি নিয়ে কথা বলছিলেন। লা তুবকি ওয়া লা তাদহার। সেটা কোন কিছুকেই আর টিকে থাকতে দেয় না। (অর্থাৎ সবকিছুকেই শেষ করে দেয়)।

গ্র্যান্ডশেখ আবদ'আল্লাহ আদ দাগেস্তানি (কা) থেকে মাওলানা শেখ নাজিম কি ধরনের রুহানী শক্তি এবং ক্ষমতা পেয়েছিলেন তা আমি জানি না। কিন্তু আমি জানি যে, আমাদের কাছে যেই ক্ষমতা আছে সেখান থেকে সমর্থন নেয়ার জন্য উনি ফিরে এসেছিলেন। যেই ক্ষমতা তাঁর কাছে থেকেই এসেছিলো সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে নেবার জন্যই তিনি ফিরে এসেছিলেন, আর এই সমস্ত রুহানী পাওয়ার কিন্তু একটাই উৎস থেকে আসছে। ইমাম মাহদী আলাইহিস সালামের আত্মপ্রকাশের সময় ঘনিয়ে আসছে বলেই তিনি সেটা করলেন। এই বিষয়ে আমি যদি আরো বেশি কথা বলি, তাহলে তোমাদের জন্য সমস্যা আর জটিলতা সৃষ্টি হবে।

তিনি আমার ডান হাতও ধরলেন আবার একই সাথে বাম হাতও ধরলেন। দুইহাত একসাথে ধরে তিনি আমাকে শূন্যে তুলে ফেললেন। যেই ক্ষমতা তিনি দিলেন আর নিলেন তা রাসুল ﷺ এর হুকুমেই করা হয়েছিলো।

সকালে আমি ঘুম থেকে উঠলাম, আমি তখন কাদছিলাম। দরবেশরা, আউলিয়ারা সব সময় আল্লাহকে অনুরোধ করেন এই প্রচন্ড গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলোকে বিলম্বিত করতে। কারণ সেই ঘটনা গুলো ভীষণই জটিল। সাত জনের ভেতরে মাত্র এক জন মানুষ বেচে থাকবে। আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌।

[মাওলানা মাথা নিচু করে ডানে বামে নাড়ছেন, এই ভীষণ জটিল সময় যেন তিনি চোখের সামনে দেখতে পারছেন।]

যারা বেচে থাকবে তাদের জন্য শুভ বারতা আর অভিনন্দন। আর যারা সেই সময় পর্যন্ত পৌঁছাবে তাদের জন্যেও শুভ বারতা। আল্লাহ্‌ সুবহানাহুওয়াতা'আলা আমাদেরকে তাঁর রহমতের ভেতরে রাখুন, আমাদেরকে তাঁর হেদায়াতের পথে রাখুন। উম্মত যদি নিজেদেরকে ঠিক করে নিতে পারে, তাহলে তো পুরা শরীরটাই সুস্থ হয়ে গেলো।

[জিকির শুরু হলো]

[মাওলানা হঠাৎ আবার কথা বলা শুরু করলেন।]

যেই কিনা আল্লাহর রাসুল ﷺ এর সাহাবা তারা বিজয়ী হয়েছেন। যারা তাঁর সাহাবা নয় তারাই পরাজিত হয়েছে। এবং যারাই কিনা সাইয়িদাত আন-নিসা, বেহেস্তের নারীদের নেত্রী, সাইয়িদা ফাতিমা আজ-জাহরা (রাদি আল্লাহু তা'আলা আনহা), তাদের মধ্যে, যারা বিজয়ী। তাঁর বিয়ের দেনমোহর হলো মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মতের পাপের ক্ষমা। তাঁর মহিমাময় বাবা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মতকে তিনি তাঁর নিজের থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কাজেই আমাদের সবার জন্যই শুভ বারতা।

[জিকির আবার শুরু হলো]

© কপিরাইট ২০১৯ সুফিলাইভের মাধ্যমে। সকল অধিকার সংরক্ষিত।

We Don't Argue About the Holy Companions / Mawlana Shaykh Hisham Kabbani - Khatm ul-Khwajagan

UA-984942-2