আস সালামু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। মানুষ দূর দূরান্ত থেকে আমার কথা শুনতে আসে, সেটা আমার জন্য একটা অকল্পনীয় সম্মান, যখন কিনা আমি আল্লাহ্ সুবহানাহুতা'আলার সবচাইতে দুর্বল ভৃত্যদের একজন।
আ'উজুবিল্লাহি মিন আশ-শায়তানি 'র-রাজিম
বিসমিল্লাহি 'র-রাহমানি 'র-রাহিম
নাওয়াইতুল আরবা'য়িন, নাওয়াইতু 'ল-ইতিকাফ, নাওয়াইতু 'ল-খালওয়া, নাওয়াইতুল উজলা, নাওয়াইতু 'র-রিয়াদা, নাওয়াইতু 'স-সুলুক, লিল্লাহি তা'আলা ফি হাআদা 'ল-মাসজিদ
আতিউল্লাহ ওয়া আতি উ'র রাসুলা ওয়া উলি 'ল-আমরি মিনকুম
আল্লাহ্কে মান্য করো, রসুলকে মান্য করো, এবং মান্য করো তাদেরকে যাদের উপর তোমাদের ভার অর্পণ করা হয়েছে [৪:৫৯]
যখনই আমাদের শক্তির প্রয়োজন হয়, সহায়ের প্রয়োজন হয়, বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, আমরা একটা উৎসের খোঁজ করি, হোক সেটা মেইন লাইন, কি একটা ব্যাটারি। যদি ব্যাটারি না থাকে, তাহলে পুরনো ব্যাটারিটাকেই নতুন করে চার্জ করে নিতে চাই আমরা। কাজেই শক্তির কোন বিকল্প নাই। মানুষের জন্য এই শক্তি আসে খাবার থেকে। আর সেজন্যই আল্লাহ্ আমাদের জন্য খাবারের জোগান দিতে থাকেন। আমাদের চারপাশে যত লক্ষণ আছে, চিহ্ন আছে, নিদর্শন আছে, 'আয়াত' আছে সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাটা ভীষণই জরুরী; না হলে আমরা বুঝতে ব্যর্থ হবো ইসলাম কি জিনিস, ঈমান কি জিনিস, ইহসান কি জিনিস, তরিকা কি জিনিস। এমনকি কেউ যদি শরিয়তের সম্পূর্ণ জ্ঞান নাও রাখে, ইসলাম ধর্মের সমস্ত কিছু যদি তার নখদর্পণে নাও থাকে, তারপরেও আশেপাশের বিষয়গুলো বুঝে নেয়া তার জন্য অবশ্যকর্তব্য।
এই যে আমাদের মাথার উপরে এই পাখা গুলো ঘুরে চলেছে, দ্যাখো, ওরা কিন্তু ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে না। সারা দিন ওরা ঘুরছে এবং ঘুরতেই থাকবে, ঠিক যেভাবে জ্বলতে থাকবে এই বাতিগুলো। কেন? কিভাবে? কারণ ওদের সাথে বিদ্যুতের একটা সংযোগ আছে। ঠিক সেভাবে আমাদেরও সংযুক্ত থাকা অবশ্য প্রয়োজনীয়। সংযোগ না থাকলে এই পাখাগুলো থেমে যেত আর ঠাণ্ডা বাতাসও থেমে যেত সেই সাথে। গরমে ঘাম ঝরত আমাদের সবার। কিন্তু এই পাখাগুলো নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, আর সেটাই একজন ভৃত্যের কাজ, বান্দার দায়িত্ব কর্তব্য। আর সেজন্যই বান্দা কখনও ক্লান্ত হয় না, তার কাজ সে করতে থাকে নিরলস ভাবে।
এই বেহেশতি শক্তি আল্লাহ্ ফেরেশতাদের দিয়েছেন, যার মাধ্যমে তারা বেহেশতি ইবাদত করে চলেছে, প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ্র জিকির, আল্লাহ্র হামদ গেয়ে চলেছে তারা। আজ সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন আছে, বিশেষ করে মুসলমানের কাছে। সেই ফোনের ব্যাটারি কমে আসলে তারা ফোন রিচার্জ করে, যদি চার্জ না হয় তাহলে তাদেরকে হয় আরেকটা ব্যাটারি কিনে নিতে হয়, নয়তো আরেকটা ফোনের প্রয়োজন হয়। আল্লাহ্ আমাদের হৃদয়ের ব্যাটারি চার্জ করে নেয়ার জন্য নামাজ, রোজা, হজ্বের বিধান দিয়েছেন। আল্লাহ্ এই ব্যাটারির চার্জ করে নেবার জন্য দিয়েছেন, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"। কিন্তু আমরা নেশার মতো দুনিয়ার পেছনে ছুটে মরছি, আর ঠিক ততক্ষণই আমরা ছুটে বেড়াতে থাকি, যতক্ষণ না ব্যাটারিটা নিঃশেষ হয়ে আসে। ব্যাটারির রিচার্জ করতেও শক্তি লাগে, নেটওয়ার্ক লাগে। আল্লাহ্ও সেভাবে কলবের ব্যাটারি রিচার্জ করার জন্য নেটওয়ার্ক দিয়েছেন। কেমন সেই নেটওয়ার্ক? সেটাই জিকির, যা ওই ব্যাটারিকে নতুন শক্তি দেয়, নতুন জীবন দেয়। কাজেই তোমাদের জিহ্বা থেকে জিকরুল্লাহকে দূরে রেখে দিও না।
أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
আলা বি জিকরিল্লাহি তাতমা'ইন্নুল কুলুব
নিশ্চয়ই আল্লাহ্র স্মরণেই কলবের প্রশান্তি [সুরা রা'দ, ১৩:২৮]
প্রচুর মানুষ আছে যারা কিনা জিনে বিশ্বাস করে। তুমি জিন বিশ্বাস করো, আর তুমি ফেরেশতায় বিশ্বাস করো না? আল্লাহ্ তোমাকে ফেরেশতাদের শক্তি দিয়েছেন, আর সেই তুমি কিনা খারাপ জিনকে ভয় পাচ্ছো? আসমান থেকে ধুমকেতু ছুঁড়ে ছুঁড়ে সেই সব জিনকে ধ্বংস করে দেবে ফেরেশতারা। কাজেই তোমার ভয়ের কি আছে? মানুষ বলে, আমার উপরে জিন ভর করেছে। আল্লাহ্কে স্মরণ করতে থাকো, বলো আলহামদুলিল্লাহ ওয়া শুকরানলিল্লাহ। সেটাই জিন আর ইবলিশের হাত থেকে তোমার সবচাইতে বড় সুরক্ষা। আল্লাহ্র নবী ﷺ বলেন, "আল্লাহ্র ফেরেশতারা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে থাকে, যেখানেই মানুষ যেতে থাকে, তারা অনুসরণ করতে থাকে। সবখানে ওই ফেরেশতারা খুঁজে বেড়ায় জিকিরের মজলিশ। যদি তারা খুঁজে পায়, তারা বলে, 'ইয়া রাব্বি, আমরা একটা জিকরুল্লাহর মজলিশ খুঁজে পেয়েছি'। বিচারের দিনে সেটাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে। ওই ফেরেশতা এসে তোমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আমাকে জিজ্ঞেস কোরো না যে, তারা যে আমাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে, কিভাবে দেবে, কেমন করে আমি জানব যে তারা দেবে? এটা আল্লাহ্র নবীর ﷺ হাদিস। তিনি নিজে বলেছেন, ফেরেশতা আছে, ঠিক যেমন এই মুহূর্তে এই মসজিদ ভর্তি ফেরেশতা।
আল্লাহ্র রসুল ﷺ সব সময় বলেই চলেছেন, "ইয়া রাব্বি, উম্মতি, উম্মতি"। আমার উম্মত, আমার উম্মত, আমি তাদেরকে সাবধান করে দিয়েছি, আমি তো তাদেরকে ফেলে দেব না। আল্লাহ্ সুবহানাহুতা'আলা তাঁর পবিত্র গ্রন্থে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,
আ'উজুবিল্লাহি মিন আশ-শায়তানি 'র-রাজিম
বিসমিল্লাহি 'র-রাহমানি 'র-রাহিম
أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ وَوَضَعْنَا عَنكَ وِزْرَكَ
আলাম নাশরাহ লাকা সাদরাক্ব ওয়া ওয়াদা'না আনকা উয়িজরাক্ব
আমরা কি আপনার বক্ষ উন্মোচন করিনি এবং আপনার বোঝাকে হালকা করে দেই নাই? [৯৬:১]
আল্লাহ্ ﷻ তাঁর হাবীবকে ﷺ বলছেন, "ও মহিমান্বিত নবী, আমরা কি আমার ভালবাসা দিয়ে আপনার হৃদয় পরিপূর্ণ করে দেইনি?" এটা একটা প্রশ্ন, খেয়াল করো। ও মুহাম্মাদ ﷺ, আমিই কি সেই রব নই? তাহলে আপনি চিন্তিত কেন?
এটা কি আল্লাহ্র আজিমতের হিসেবে, নাকি আল্লাহ্র নবীর ﷺ উপলব্ধির হিসেবে, নাকি আল্লাহ্র অলিদের বুঝের হিসেবে?
(কোন এক অজানা কারণে এখানে মওলানা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন)
ওয়া রাফা'আনা লাকা জিকরাক, আপনার স্মরণকে আমরা সম্প্রসারিত করে দিয়েছি।
(এখন মওলানা বসে গেলেন)
আমরা আপনার হৃদয়কে, আপনার বক্ষকে, আপনার স্মরণকে, আপনার সম্মানকে সম্প্রসারিত করে দিয়েছি, কোন সীমা ছাড়াই! আর সেখানে আপনি কিনা আপনার উম্মতকে নিয়ে চিন্তিত? তাদেরকে নিয়ে যান। আমি হুকুম করে দিচ্ছি যে আপনি তাদের সবার জন্য শাফায়াত করতে সক্ষম হবেন, তাদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করিয়ে দেবেন আপনি। আপনার উম্মতের জন্য আমরা ফেরেশতা সৃষ্টি করেছি, যারা কিনা সারা দুনিয়ার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায়। আল্লাহ্র রসুল ﷺ বলেন,
إن لله ملائكة يطوفون في الطرق، يلتمسون أهل الذكر
ইন্নাল্লাহি মালা'ইকাতুন ইয়াতুফূনা ফি'ত-তুরুকাত ইয়ালতাম্মিসুনা মাজালিস আজ-জিকরি
আল্লাহ্র ফেরেশতা সমগ্র দুনিয়ার বুকে ঘুরে বেড়ায় এবং তাদেরকে খুঁজে বেড়ায় যারা কিনা জিকিরের মজলিশে বসে জিকির করে চলেছে।
ও তোমরা, আহলুজ'জিকির - যারা কিনা জিকির করো, ওই ফেরেশতারা তোমাদেরকে খুঁজে চলেছে। জঙ্গলের একটা গাছের নিচে বসেও যদি কেউ জিকির করে চলেছে, তাদেরকে খুশি করার জন্য আমি ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করে চলেছি। ওই ফেরেশতাগুলো ছুটে ছুটে তাদের কাছে আসতে থাকে, যে কিনা জিকির করে চলেছে। আর এটা হলো আলাম নাশরাহ লাকা সাদরাক্ব -এর একটি অর্থ।
আল্লাহ্র নবীর ﷺ শাফায়াত
মওলানা শেখ হিশাম কাব্বানি
মে ১১, ২০১০,
মসজিদ-আল-বিনাহ্, জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া