১৩ আগস্ট ২০১১ লন্ডন, যুক্তরাজ্য
সিএসসিএ, ফেলথামে যুহর নামাজের পর
আসসালামু ’আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকাতুহ।
আয়াতটিতে একটি বিশাল রহস্য রয়েছে:
أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ
আত্বি-উ-ল্লা-হা ওয়া আত্বি-উ-র্ রসু-লা ওয়া উ-লি-ল্ আমরি মিনকুম।
আল্লাহর আনুগত্য কর, নবীর আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বকারীদের আনুগত্য কর। (সুরা আন নিসা, ৪:৫৯)
গ্র্যান্ডশেখ (ق) এবং মাওলানা শেখ নাজিম, আল্লাহ তাকে দীর্ঘায়ু দান করুন (তখন মাওলানা শেখ নাজিম জীবিত ছিলেন) বলেছিলেন, “যে কেউ এ আয়াত তিলাওয়াত করে, যখন সে ‘আতিউল্লাহ বলে, আল্লাহর আনুগত্য করবে, তখন সে এমন হবে যেন সে তার সমস্ত দায়িত্ব পালন করে এবং যা কিছু নিষেধ তা বর্জন করে। এখানে একটা গোপন রহস্য আছে! আল্লাহর বাণী আমাদের মত নয়; আমাদের শব্দগুলি অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ; তবে আল্লাহর বাণী কখনও শেষ হয় না, পবিত্র কোরআনে তিনি যেমন বলেছেন:
قُل لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا
কুল লাও কা-নাল্ বাহরু মিদা-দান লিকালিমা-তি রব্বি- লা নাফিদাল্ বাহরু ক্বাবলা আন তানফাদা কালিমা-তু রব্বি- ওয়া লাও জী’না- বিমিথালিহি মাদদা
বলুন (ও মুহাম্মাদ), “আর যদি মহাসাগরগুলি কালি এবং গাছগুলির কলম হতো তবে সেগুলি আমাদের পালনকর্তার কথা লেখার আগেই নিঃশেষিত হয়ে যাবে, এমনকি যদি আমরা এর মতো আরও একটি সমুদ্র যুক্ত করে দিলেও।” (সুরা আল-কাহফ, ১৮: ১০৯)
গাছ যদি কলম হত এবং মহাসাগর কালি থাকত তবে প্রথমে কাঠটি ক্ষয়ে যেত এবং কালি শেষ হয়ে যেত, কারণ আল্লাহর বাণী কখনই শেষ হবে না! পবিত্র কোরআনে প্রায় ৩০০,০০০ শব্দ রয়েছে যা লিখলে শেষ হবে, কিন্তু এখানে আল্লাহ তাআলা বলছেন, “এটি শেষ হয় না”; কেবল আপনার জ্ঞানে এটি শেষ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি পবিত্র কোরআনের একটি জুজ (পারা) প্রতিদিন পড়েন তবে আপনি ত্রিশ দিনের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ পাঠ শেষ করবেন; তবে, আল্লাহ তা’আলা বলছেন এটি শেষ হচ্ছে না কারণ শব্দগুলির রহস্য রয়েছে। আপনি কোনও শব্দের একটি অর্থ বুঝতে পারেন, তবে এটি সমস্ত অর্থ নয়। পবিত্র কোরআনের সাগরে কেউ সাঁতার কাটতে পারে না এবং বলতে পারে না যে এটি শেষ হবে, কারণ আল্লাহর শব্দের মহাসাগর কখনই শেষ হবে না। এর অর্থ হলো, প্রতিটি শব্দে প্রতিটি বর্ণের পিছনেই অর্থ রয়েছে এবং পবিত্র কোরআনে প্রায় ৬০০,০০০ অক্ষর রয়েছে!
গ্র্যান্ডশেখ আব্দুল্লাহ আল-ফায়েজ আদ-দাগেস্তানি ق বলেছেন, “পবিত্র কুরআনের প্রতিটি বর্ণের জন্য আল্লাহ তা’আলা তাঁর আউলিয়াল্লাহর কাছে ১,২৪,০০০ মহাসাগর উন্মুক্ত করেছিলেন, এবং তিনি একজন ওয়ালির জন্য যা খুলে দিয়েছিলেন, অন্য জনের জন্য তা খুলে দেন নি, কারণ তিনি অনুলিপি করেন না এবং আল্লাহর সমস্ত বাণী এই আয়াতের মধ্যে রয়েছে, আত্বি-উ-ল্লা-হা ওয়া আত্বি-উ-র্ রসু-লা ওয়া উ-লি-ল্ আমরি মিনকুম, "আল্লাহর আনুগত্য কর, নবীর আনুগত্য কর, এবং তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বকারীদের আনুগত্য কর।”
রসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
يس قلب القرآن
ইয়াসি-ন ক্বলবাল্ কুরআন।
(সুরা) ইয়াসিন কুরআনের হৃদয়। (আত্-তিরমিযি)
এর মানে হলো, সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ ﷺ হলেন কুরআনের হৃদয়, যেহেতু ‘ইয়াসিন’ হলেন মুহাম্মাদ ﷺ! আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা বলেছেন,
يس. والقُرْآنِ الحَكِيمِ
ইয়াসিন। ওয়াল ক্বুরআ-নিল্ হাকিম।
ইয়াসিন এবং প্রজ্ঞাময় কোরআন। (ইয়াসিন ৩৬:১-২)
“ইয়াসিন ও কুরআন” বলে, আল্লাহ ‘’আতাফ’ করছেন, একটি বাক্যকে অন্যটির উপরে চাপিয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহ তা’আলা মহানবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এখানে মহত্ত্ব দান করেছেন, যেমনটি হ’ল, “তাঁকে (ﷺ) এবং পবিত্র কোরআন!” এজন্যই বলা হয় যে, ইয়াসিন, সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ হচ্ছেন কোরআনের হৃদয় এবং আল-ফাতিহাহ হ’ল মুহাম্মদ ﷺ এর হৃদয়! আপনি যদি নিজের নামাজে সুরা আল-ফাতিহার সাতটি আয়াত না পড়েন তবে সে নামাজ গৃহীত হবে না। যদি আপনি শুধুই সুরা আল-ফাতিহা পাঠ করেন, এর পরে কোনও আয়াত বা সুরা না পড়েন, আপনার নামাজটি বৈধ হবে, তবে তা (সুরা ফাতিহা) ছাড়া নয়। এর অর্থ হল, আপনি যখন “নবি করিম ﷺ এর হৃদয়” স্বীকার / অন্তর্ভুক্ত করবেন তখন আপনার নামাজ বা প্রার্থনা কবুল হয় যা প্রতিটি নামাজে সর্বদাই উজ্জ্বল থাকে!
সুতরাং যখন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, “আমার কথা কখনই শেষ হয় না”, এর অর্থ পবিত্র কোরআনের প্রতিটি শব্দের জন্য অন্তহীন ব্যাখ্যা এবং গোপনীয়তা রয়েছে। সুতরাং আপনি যদি সাইয়্যিদিনা আবু বকর (রা.), সাইয়্যিদিনা উমার (রা.), সাইয়্যিদিনা উসমান (রা.), সাইয়্যিদিনা আলি (রা.) এর সময় থেকে মাওলানা শেখ নাজিম ق পর্যন্ত সমস্ত আউলিয়াউল্লাহর জ্ঞান যোগ করেন, নকশবন্দি তরিকার সকল শাখার এবং অন্যান্য তরিকার, সকল ১,২৪,০০০ আউলিয়াউল্লাহ, যাদের মধ্যে ৭০০৭ জন নকশবন্দি আর বাকিরা অন্যান্য তরিকার, পবিত্র কোরআনের একটি শব্দের তাৎপর্যই পাওয়া যাবে না! অনেক আউলিয়াউল্লাহ রয়েছেন, তবে সবাই একই মহাসড়কের নন। আধ্যাত্মিকতায় শৃঙ্খলা থাকে। প্রত্যেক ওয়ালি তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে তার নিজস্ব মহাসড়কে থাকেন, সুতরাং এক ওয়ালি থেকে অন্য ওয়ালিতে ঝাঁপ দেবেন না! সবাই নবি করিম ﷺ এর কাছ থেকে নিচ্ছেন, যেমন বলা হয়েছে, “সবাই রসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছ থেকে আসা জ্ঞানের প্রবাহটি গ্রহণ করছে।”
এমনকি সমস্ত অর্জিত জ্ঞানের পরও তারা এখনও বলে না, “আমরা জানি,” কারণ আরও অনেক কিছু আছে! উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কোনও বইয়ের দোকানে গিয়ে ইসলামিক অধ্যাত্মবাদ সম্পর্কিত বইগুলি অনুসন্ধান করেন, আপনি সারা বিশ্বের হাজার হাজার বই খুঁজে পেতে পারেন এবং যদি এগুলিকে একত্র করা হয় তবে তা সেই সমুদ্রের এক ফোঁটাও হবে না, যেমন গ্র্যান্ডশেখ ق এবং মাওলানা শাইখ নাজিম ق বলেছেন, “আল্লাহ তা’আলা নবি করিম ﷺকে যা কিছু জ্ঞান দিয়েছিলেন তা কেবল আল্লাহই জানেন।।” প্রতিটি মুহূর্তে তিনি নবি করিম ﷺ কে যে জ্ঞান দিচ্ছেন এটা (আর সকল সৃষ্টির জ্ঞানের যোগফল) তার এক ফোঁটাও নয়! পবিত্র কুরআন হলো আল্লাহর বাণী, সুতরাং কেউই সত্যিকারভাবে জানতে পরে না কেননা তা শুধু রসুলুল্লাহ ﷺ এর জন্যই এবং আউলিয়াউল্লাহরা শুধু ততটুকু জানতে পারেন নবি ﷺ যতটা তাদের হৃদয়ে ঢেলে দিচ্ছেন, এর বেশি নয়। তারা জ্ঞান মহাসাগরের, নবি ﷺ এর মহাসাগরের তীরে দাঁড়িয়ে, হয়রান, হতবাক ও বিস্মিত।
এটি গ্র্যান্ডশেখ আবদুল্লাহ ق এর গল্প। একবার সাইয়্যিদিনা আবু ইয়াজিদ আল-বিস্তামি ق আউলিয়াউল্লাহর সহযোগিতায় ছিলেন। কিছু আউলিয়াউল্লাহ নবি ﷺ এর উপস্থিতিতে রয়েছেন, এবং কে কতটুকু গ্রহণ করতে পারবেন তার উপর নির্ভর করে এক মিনিট বা এক বা দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং গ্র্যান্ডশেখ ق বলেছেন, “নবি করিম ﷺ ও সাহাবা (রা.) এর সঙ্গে মহান আউলিয়াউল্লাহর এই সমাবেশে নবিজি ﷺএর অনুমতিক্রমে সাইয়্যিদিনা আবু ইয়াজিদ আল-বিস্তামি ق অন্য সকল আউলিয়াউল্লাহর উদ্দেশ্যে কথা বলেছিলেন।” আমরা যা বলছি তা হলো আধ্যাত্মিক দৃষ্টি, কাশফ।
মহানবি (ﷺ) এর হাদিসে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
ولا يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه، فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به وبصره الذي يبصربه، ويده التي يبطش بها ورجله التي يمشي بها
ওয়া লা- ইয়াযা-লা ’আবদি- ইয়াতাকারাবু ইলাইয়্যা বিন্ নাওয়াফিল হাত্তা উহিব্বাহ। ফাইযা- আহবাবতাহু কুনতু সামাউহুল্লাযি- ইয়াসমাউ বিহি ওয়া বাসারাহুল্লাযি- ইউবসিরু বিহি ওয়া ইয়াদাহুল্ লাতি- ইয়াবত্বিশু বিহা- ওয়া রিজালাহুল্ লাতি- ইয়ামশি- বিহা-
আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি। আমি যখন তাকে ভালবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, হাত হয়ে হয়ে যাই যা দিয়ে সে কাজ করে, এবং যে পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে চলে (এবং অন্যান্য বর্ণনায় রয়েছে, “এবং যে জিহ্বা যা দিয়ে সে কথা বলে)। (হাদিস কুদসি, বুখারি)
আউলিয়াউল্লাহগণ আল্লাহ তাদের যে নূর দিয়েছিলেন তা দিয়েই দেখেন। সুতরাং সেই কাশফে সাইয়্যিদিনা আবু ইয়াজিদ আল-বিস্তামি ق বললেন, “আমার একটা মন্তব্য আছে।” আউলিয়াউল্লাহ অভিযোগ বা মন্তব্য করতে পারেন, কিন্তু তাদের সবাই তা করেন না; যেহেতু কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করতে পছন্দ করেন এবং কিছু বলেন না; তারা শোনেন, এবং যখন রসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছ থেকে আদেশ আসে তারা তা অনুসরণ করেন। তিনি বলেছিলেন, “যখন নকশবন্দি ত্বরিকার সমস্ত মুরিদ ইহ্দা (إِهدَاء) আদায় করে, তখন তারা কেন খাসসাতান, বিশেষত শাহ নকশবন্দকে বলে? তারা যদি আমাকে ইহদা করে এবং বলে, ‘বিশেষত বায়েজিদ আল-বিস্তামির উদ্দেশ্যে,’ আমি আমার যেমন ক্ষমতা আছে সে অনুযায়ী তাদের সেই মহাসমুদ্রের তীরে রাখব!”
দেখুন ইহদা কত শক্তিশালী! তারা আপনাকে জ্ঞান মহাসাগরের তীরে নিয়ে যায়, যেখানে রসুলুল্লাহ ﷺ! আবু ইয়াজিদ আল-বিস্তামি ق বলেছেন, “যদি তারা বলে, ‘ইলা রুহি ইমামি-ত তারিকাহ ওয়া গাওথি'ল্ খলিকাহ আবু ইয়াজিদ আল-বিস্তামি, (বিশেষতঃ আমরা যা পড়েছি তার পুরস্কার দিন) তরিকার ইমামের আত্মা এবং সৃষ্ট বিশ্বের সুপারিশকারী আবু ইয়াজিদ বায়াজিদ আল-বিস্তামি ق, আমি তাদের এমন এক তীরে নিয়ে যাব যেখানে কেউ পৌঁছতে পারে না, যেখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি, তাদের জন্য অপেক্ষা করছি!” তখন একজন ওয়ালি নবি করিম ﷺ এর আধ্যাত্মিক উপস্থিতিতে কথা বলার অনুমতি চেয়েছিলেন এবং তাঁর নাম উল্লেখ করার অনুমতি আমার নেই, তবে তিনি বলেছিলেন, “ইয়া সায়্যিদি, ইয়া বায়েজিদ! হ্যাঁ, আপনি তাদের সে তীরে রাখতে পারেন, তবে আপনি এই কথাটি বলছেন কারণ আপনি তীরের অন্যপ্রান্তে শাহ নকশবন্দকে দেখছেন না। অবশ্যই যদি কেউ সেখানে না থাকে তবে সে কিভাবে তার মুরিদদেরকে সেখানে রাখবে? তবে শাহ বাহাউদ্দিন নকশবন্দ ইতিমধ্যে অন্য তীরে রয়েছেন, তাদের সবাইকে সেখানে রাখছেন! রসুলুল্লাহ ﷺ এর আশীর্বাদে তিনি সেই সমুদ্রকে অতিক্রম করেছেন এবং তাঁর মুরিদদেরকে অন্যতীরে রাখেছেন, যেখানে তারা “প্রস্তুত”, নকশবন্দিরা -- প্রস্তুত, যেন পুরো মহাসমুদ্র তাদের অন্তরে ঢেলে দেওয়া হয়েছে!” এবং প্রতিটিবার আপনি ইহদা পড়ার ক্ষেত্রে এটি সত্য!
সাইয়্যিদিনা শাহ নকশবান্দ ق ও আউলিয়াউল্লাহ তাদের অনুগামীদের তারা যেখানে পৌঁছেছেন সেখানে নিয়ে পারেন এবং প্রত্যেক ওয়ালি এটি করতে পারে না, কারণ এটি আল্লাহতা’আলা তাঁর কিছু আউলিয়াল্লাহকে দিয়েছেন। আউলিয়াউল্লাহর প্রতি আমাদের সমস্ত শ্রদ্ধাসহই বলি, এটি এভাবেই কাজ করে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আবু ইয়াজিদ আল-বিস্তামির ق মতো কথা বলার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, যিনি প্রচুর দাওয়াহ করেছিলেন। কিছু আউলিয়া কথা বলে না; আপনি তাদের সাথে বসুন, তারা যিকর করতে থাকেন এবং এটুকুই; কিন্তু তারা আরও বেশি শক্তিশালীও হতে পারেন।
নকশবন্দি ত্বরিকার অন্যতম গ্র্যান্ডশেখ সাইয়্যিদিনা আবু আহমদ আস-সুঘুরি ق বলেছেন, “আমার যদি সাইয়্যিদিনা জামালউদ্দিন আল-ঘুমুকি আল-হুসাইনি ق এর জিহ্বা থাকত তবে আমি সবাইকে মুসলিম বানিয়ে ফেলতাম!” এর অর্থ, তাকে হৃদয় থেকে জিহ্বায় জ্ঞান আনার অনুমতি দেওয় হয় নি। যদি তা জিহ্বার জন্য হয়, তবে সে হৃদয়ে কি আছে? তাদের বলার অনেক কিছুই আছে তবে তাদের অনুমতি নেই। এক ওয়ালি থেকে অন্য ওয়ালিতে শক্তি বাড়বে। এটি অন্য ওলিয়াউল্লাহকে হেয় করার জন্য নয়, তবে এটি এইভাবেই কাজ করে, কারণ প্রতিটি মুহূর্তে নবি করিম ﷺ অধিকতর মর্যাদায় সমুন্নত হতে থাকেন এবং বিভিন্ন জ্ঞান আসতে থাকে।
ফিকাহে, ইসলামী আইনশাস্ত্রে রসুলুল্লাহ ﷺ একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, কিন্তু কিছু দিন বা সপ্তাহের পরে তিনি একই হাদিসটিকে অন্যভাবে বর্ণনা করেছেন, কারণ যখন তিনি ঐশী অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তখন তিনি একই হাদিস বিভিন্ন স্তর থেকে বর্ণনা করেন, সুতরাং এটি পরিবর্তন। একইভাবে, আউলিয়াউল্লাহর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা অনুসারে পরিবর্তনগুলি হয়ে থাকে; তারা যা দেখেন বা যা করার আদেশ দেওয় হয় সে অনুযায়ী পরিবর্তনগুলো হয়; আপনি তা পছন্দ করেন বা না করেন। সুতরাং আমাদের বলতে হবে, সামি’না- ওয়া আতা’না-, “আমরা শুনি এবং আমরা তা মানি।” আপনি বলতে পারবেন না, “আমি এটি শুনেছি কিন্তু আমি তা মানতে চাই না।” আপনাকে অবশ্যই মানতে ও গ্রহণ করতে হবে; আপনি যদি গ্রহণ করেন তবে আপনার পর্যায় উন্নত হবে; কারণ তাদের কথা প্রত্যেকের জন্য পরীক্ষা এবং তাদের কথায় অনেক গোপন বিষয় রয়েছে।
সেই ওয়ালি বলেছিলেন, “শাহ নকশবান্দ তাদের (তার মুরিদদের) অন্য তীরে রাখছেন।” এর অর্থ, শাহ নকশবন্দ ق এই সমস্ত গোপনীয়তা যা আল্লাহ তা’আলা তাকে দিচ্ছেন, এক তীর থেকে অন্য তীরে নিয়ে পৌঁছাচ্ছেন! সাইয়্যিদিনা বায়েজিদ আল-বিস্তামি ق এই গোপনীয়তাগুলি তাঁর তীরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তারপরে তাঁর তীরে থেকে দ্বিতীয় পর্যন্ত আওলিয়াউল্লাহর অন্যান্য তীর শুরু হয় যতক্ষণ না তারা শাহ নকশবন্দে ق আসেন। তাহলে গ্র্যান্ডশেখ আবদুল্লাহ আল-ফায়েজ আদ-দাগেস্তানী ق সম্পর্কে আপনাদের কী মনে হয়? কারণ এ সমস্ত রহস্য তাঁর কাছে এসেছে, এবং তা এখন মাওলানা শেখ নাজিমের ق কাছে!
সবকিছুই উর্ধ্বারোহণে রয়েছে। আমরাও রয়েছি, আমাদের হৃদয়েও ক্রমাগত নতুন জ্ঞান আপলোড করা হচ্ছে। তবে আপনার একটি পাসওয়ার্ড দরকার। আজ, তারা পাসওয়ার্ড ছাড়া কিছু খুলতে পারে না। আউলিয়াউল্লাহ সর্বদা আপলোড করছেন এবং দিচ্ছেন, এমনকি যদি আপনি তাদের সাথে নাও বসে থাকেন, যেমনটি নবি ﷺ বলেছেন:
لي ساعت مع الله و لي ساعت مع الخلق
লি- সা-আতুন মাআ আল্লা-হ ওয়া লি- সা-আতুন মাআল্ খলাক্ব
আমার এক ঘন্টা ঐশী উপস্থিতিতে এবং এক ঘন্টা সৃষ্টির সাথে।
আর একটি হাদিসে সামান্য পার্থক্য রয়েছে, তিনি বলেছেন:
لي وجه مع الله و لي وجه مع الخلق
লি- ওয়াজহুন মাআ আল্লা-হ ওয়া ওয়াজহুন মাআল্ খলাক্ব
আমার একটি মুখ ঐশী উপস্থিতিতে এবং একটি মুখ সৃষ্টির সাথে।
সুতরাং আউলিয়াউল্লাহ রসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছ থেকে এই গোপন বিষয়গুলি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে যাচ্ছেন এবং অনুসারীরা যা করুক না কেন, তারা তাদের অনুসারীদের সাথে রয়েছে। এমনকি যদি মুরিদ কোনও ডিস্কোতে থাকে তবে তারা তার কাছে পৌঁছতে পারেন এবং তার হৃদয়ে আপলোড করতে পারেন এবং তাদের আপলোড করা কখনই থামবে না কারণ তারা জানেন যে, একদিন সে তার অনুভূতিতে ফিরে আসবে, অনুতাপ করবে এবং তার জন্য অপেক্ষা করা সমস্ত জ্ঞান খুঁজে বের করবে, কারণ সে বায়াত নিতে তাঁর শেখের দিকে হাত বাড়িয়েছে। সে বায়াত সংযুক্ত, সুতরাং সে শৃঙ্খলিত বা আবদ্ধ। আপনি ফিরে না আসলেও তারা আপনাকে আপনার পছন্দমতো যেতে দেয়, কারণ শেষ পর্যন্ত শেষ সাতটি শ্বাস-প্রশ্বাসে আপনি ফিরে আসবেন, কারণ তারা আপনার সাথে উপস্থিত থাকবে। অনেক মুরিদ তাদের শেখের সাথে তাদের `আহাদ, প্রতিশ্রুতি বা চুক্তি ছিন্ন করে দেয়, তবে তারা যে ওয়ালির সাথে থাকবে বলে লেখা হয়েছে তা তারা পরিবর্তন করতে পারে না । এমনকি যদি তারা ওয়ালিকে ছেড়ে দুনিয়াদারিতে ফিরে ফিরে গেলেও তারা এখনও তাঁর নামেই লিখিত রয়েছে। কিন্তু কেউ যদি অলস হয় তবে আমরা কী করতে পারি?
সুতরাং তারা আপনার হৃদয়ে পৌঁছাতে এবং আপলোড করতে সক্ষম হয়, তবে কী দিয়ে? এই মহাসাগর জ্ঞানে পূর্ণ কারণ আউলিয়াউল্লাহ পবিত্র কোরআনের বাক্য থেকে নিচ্ছেন। মহাসাগর শেষ হবে তবে আল্লাহর বাণী কখনই শেষ হবে না, যার অর্থ শব্দগুলির রহস্য কখনই শেষ হবে না; পবিত্র কোরআনের একটি শব্দ পুরো মহাবিশ্বকে নিমজ্জিত করতে পারে, যা (এই মহাবিশ্ব) সেই শব্দের মহাসমুদ্রের এক ফোঁটাও নয়! আল্লাহ তা’আলা আল-খালিক, “স্রষ্টা” এবং আল-আলিম “জ্ঞানী”। আল-খালিকের অর্থ, “প্রতিটি মুহহূর্তে কোনও সীমা ছাড়াই তৈরি করা।” আপনি মহান আল্লাহ তা’আলা বিরাটত্বকে সীমাবদ্ধ করতে পারবেন না; এটি সীমাহীন! যখনই তিনি সৃষ্টি করতে চান, প্রতিটি মুহূর্তে কোনও সীমা ছাড়াই সৃষ্টি ঘটে এবং এর শুরু বা শেষ সম্পর্কে জানার কোনও উপায় নেই।
এই মহাবিশ্ব মহাশূন্যে চলছে। একটি উদাহরণ দিলে, আমরা বিজ্ঞানীদের মতো বলতে পারি, সেই সাথে চলব, যেহেতু ‘বিগ ব্যাং’ এর পর কোটি কোটি বছর কেটে গেছে, তবে তারা যেমন বলেন তেমন নয় কারণ আমাদের কাছে তা খণ্ডন করার মতো ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে। তার পর থেকে এই পুরো মহাবিশ্ব, যার ৮০০০ টি ছায়াপথ রয়েছে ,যার প্রত্যেকটিতে ৮০ বিলিয়ন তারা রয়েছে, প্রতি সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কিলোমিটার গতিতে মহাশূন্যে চলেছে; এই মুহূর্তটি অবধি থামে নি। মহাকাশের দিগনির্দেশ না থাকায় এটি কোথায় চলছে তা কেউ জানে না। এই মহাবিশ্বটি কীভাবে বাতাস ছাড়াই শূন্যে চলছে, যখন এই ছোট গ্রহে এখানে আমাদের নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য বাতাস রয়েছে? আল্লাহর মহানুভবতার দিকে তাকান! আল্লাহ তা’আলা আপনাকে দেখাতে চান, “আমি যে ক্ষুদ্রতম গ্রহ সৃষ্টি করেছি, তার উপর আমি এই সমস্ত জীবন দিয়েছি। হে মানুষেরা! তুমি কি ভাববে না যে আমার অন্যান্য সৃষ্টি অনেক বড় এবং অনেক বৃহত্তর? আল্লাহ তা’আলা এ সবই রাসুল ﷺ এর কর্তৃত্বাধীন করে দিয়েছিলেন। আপনি কি মহানবি ﷺ এর মাহাত্ম্য দেখছেন?
সুতরাং প্রতিটি মুহুর্তে, সৃষ্টিকর্তার মাহাত্ম্য, আল খ-লিক্ব, তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে প্রদর্শিত হয় এবং আমরা এখনও ফেরেশতাদের কথা বলি নি। ফেরেশতাদের সৃষ্টি মানব সৃষ্টির মতো নয় যে আমাদের ছয় বা সাত সন্তানের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা সীমিত, তবে তাদের ক্ষমতা সীমাহীন। আল্লাহ প্রত্যেক মুহূর্তে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেন যা পূর্বের চেয়ে সম্পূর্ণ পৃথক; তাদের কাউকে একরকম দেখায় না বা তারা একই তাসবিহও পাঠ করে না। তাদের হামদ, তাহলিল, তাকবির এবং তাসবিহ অন্য যে-কোনও ফেরেশতার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা, যেহেতু তারা সকলে আলাদা। মহিমা প্রকাশকারী ফেরেশতা কখনও একই তাসবিহ পুনরাবৃত্তি করবে না; উদাহরণস্বরূপ, যদি একই ফেরেশতা ‘সুবহান আল্লাহ’ বলে তবে তিনি পরের মুহূর্তে বলতে পারেন, ‘আল্লাহু আকবার।’ আল্লাহ জানেন তাদের কী আবৃত্তি করতে দিয়েছেন, পবিত্র কুরআনের শব্দগুলির মতো কেউ তাদের মানে জানে না: ‘আলিফ লাম মিম,’ ‘ক্বফ হা ইয়া,’ ‘আইন, স্বদ,’ ‘হা মিম,’ ‘আইন, সিন, ক্বফ,’ ইত্যাদি।
সুতরাং শুয়ুখের দিগনির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা আপনাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি, তাঁর নবি ﷺ এর প্রতি এবং আপনার মুর্শিদের প্রতি আরও বেশি ভালবাসার জন্য অনুপ্রাণিত করে। সেইজন্য সমস্ত জ্ঞান সেই আয়াতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে:
أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ
আত্বি-উ-ল্লা-হা ওয়া আত্বি-উ-র্ রসু-লা ওয়া উ-লি-ল্ আমরি মিনকুম।
আল্লাহর আনুগত্য কর, নবীর আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বকারীদের আনুগত্য কর। (সুরা আন নিসা, ৪:৫৯)
আপনি যদি এই আয়াতটি দিনে একশবার তেলাওয়াত করেন তবে উপকৃত হবেন, যেন আপনি প্রতিদিন আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) এর প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্যসহ প্রতিদিন আল্লাহর ইবাদত করছেন। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন এবং এই সমাবেশের মঙ্গল করুন। যারা এখানে এসেছেন তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। এই জায়গাটি সবার জন্য।
আল্লাহ তা’আলা মাওলানা শেখ নাজিম আল-হাক্কানিকে দীর্ঘায়ু দান করুন এবং আপনাদের সবাইকে দীর্ঘ জীবন দান করুন।
বি হুরমাতিল হাবিব, বি হুরমাত আল ফাতিহাহ।
https://sufilive.com/The-Power-of-Presenting-Our-Dhikr-to-Sayyidina-Shah-Naqshband-q--3714.html
© Copyright 2020 Sufilive. All rights reserved. This transcript is protected
by international copyright law. Please attribute Sufilive when sharing it. JazakAllahu khayr.