Go to media page Available in: English   Bengali  

তারাই মৃত যাদের অন্তর মরে গেছে

মাওলানা শেখ মুহাম্মাদ হিশাম কাব্বানি

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতোয়ানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, মাদাদ ইয়া সাইয়িদি।

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদান ওয়া আলা আলিহি সাইয়িদিনা মুহাম্মাদ।

তারা আমাদের আলোচনার বিষয় পাল্টিয়ে দিলেন কেননা এটা একটা খুবই ভালো বিষয়।

সকল মুরিদ একসাথে পড়তে শুরু করলোঃ [সালাওয়াত ফাতিহ]

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়িদিনা মুহাম্মাদিনিল ফাতিহিল লিমা উগলিক ওয়াল খাতিমিল লিমা সাবাক, নাসিরিল হাক্কি বিল হাক্কা, ওয়াল হাদি ইলা সিরাতিকাল মুসতাকিম, ওয়া আলা আলিহি হাক্কা কাদরিহি ওয়া মিকদারিহিল আজিম।

মাওলানা বলছেনঃ

অনেক দিন আগে এমন একজন পুন্যবান ও খাঁটি মানুষ ছিলেন তার সময়ে, তার রুহানী মাকামের ধারে কাছেও কেউ ঘেষতে পারতো না। তিনি ইসলামিক শরিয়ার সমস্ত আইন কানুন মেনে চলতেন। উনি বলেছিলেন, 'আমি দালাইল আল-খাইরাত থেকে রাসুল (সা)-এর উপর সালাওয়াত পড়তে থাকবো যতক্ষণ না এক লাখ বার পুরো দালাইল আল-খাইরাত পড়া শেষ হবে, আর তখন আমি নিজে গিয়ে তা রাসুল (সা)-এর কাছে উপহার দেবো।'

কে এটা করতে পারে? (মুরিদ বলছেঃ আপনি পারেন, সাইয়িদি)। আমার কথা ভুলে যাও। কেউ ইন্তেকাল করলেই মানুষ তার কথা ভুলে যায়। তো আমরা সবাই তো মরেই গেছি, তুমি, আমি, সবাই। ইমাম গাজ্জালী বলেছিলেন, আল মাইয়িতু লাম ইয়ামুত কালবাহু। তারাই মৃত যাদের অন্তর মরে গেছে। মাইয়িত হলো এমন কেউ যার হ্রদয় আর অন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মরে গেছে, তারা আর কাজ করছে না। কিন্তু তার চোখ কিন্তু দেখছে। এই লোকটাই কিন্তু প্রকৃত অর্থে জীবন্ত, যদিও তার শরীর কিন্তু মরে গেছে। আর এখন, আমরা সবাই জেগে আছি। তোমরা যখন বিছানায় যাও, তারপর ঘুমাও, সেটা কিন্তু এক ধরনের মৃত্যু। যেরকম জীবন আছে, সেরকম আছে মৃত্যু। এই বিষয়টার দিকে আমাদেরকে দেখতে হবে।

আমি একবার ইংল্যান্ডে ছিলাম, কয়েক বছর আগে। প্রিন্স চার্লস এসে আমাদের লোকদের সামনে কিছু বলবেন, সেজন্য আমরা একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছিলাম। খুব কম মানুষ এটার কথা জানতো তখন। তবে আমরা মাওলানা শেখ নাজিমের সাথে তার লাইভ ভিডিও অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলাম, যদিও সেই সময়ে সেটা অনেক কঠিন ছিলো। মাওলানা ছিলেন সাইপ্রাসে, আমরা লন্ডনে। আমরা তাকে অনুরোধ করলাম কম্পিউটার দিয়ে সরাসরি প্রিন্স চার্লসকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বলতে। তো মাওলানা কথা বলা শুরু করলেন। তারপর কিছু একটা যেন হলো...ইসলামে কিছু এসে যায় না কার রাজকীয় অবস্থান কি। ইসলাম শুধু নির্ভর করে কেউ ভালো কাজ করে কি না, তার উপর।

আমরা তখন ম্যানচেস্টার শহরের বিখ্যাত ওল্ড ট্র্যাফোরডে, সবাই এসেছে খুব সুন্দর কাপড় পড়ে, অনেক বক্তা সেখানে। একে একে সকল বক্তা তাদের বক্তৃতা দিলেন। তখন আমি ফোনে মাওলানা শেখের সাথে কথা বলছি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কথা বলার জন্য আমার কতক্ষন সময় আছে?’

আমি বললাম, ‘যতক্ষন আপনি কথা বলতে চান’।

প্রিন্স চার্লসকে কথা বলার জন্য তিন মিনিট দেয়া হয়েছিলো। রাজকীয় প্রটোকল অনুসারে তাই তিন মিনিটের বেশী কেউই কথা বলতে পারে না। কাজেই আমরাও তাই করেছিলাম। মাওলানা শেখ ফোনে আমাকে বললেন, ‘এইগুলো সব কি হচ্ছে? ইসলাম হলো মানুষের আমল অনুযায়ী, ইসলাম একে অপরকে প্রশংসা করা নয়’। উনার এটা বলার কারণ ছিলো, তার আগের সমস্ত বক্তাই মূলত একে অপরের প্রশংসা করছিলেন উচ্ছসিত ভাবে। কাজেই মাওলানা শেখ যখন কথা বলা শুরু করলেন, উনি এমন ভাবেই কথা বললেন যা কিনা নাকশবন্দী সুফি তরিকার মতন সরাসরি মানুষের হ্রদয়ের দিকে তাক করে। এভাবে তিনি সকলের মনযোগ আকৃষ্ট করে নিলেন, আর হালকা কথাবার্তা আর প্রশংসা পর্ব উনার মাধ্যমে ওখানেই শেষ হয়ে গেলো। ওখানে উপস্থিত সবার অন্তরের ভেতরে উনি হিকমা, রুহানী জ্ঞান থেকে অপূর্ব সুন্দর কিছু চিন্তা ঢুকিয়ে দিলেন।

মাওলানা বললেন, ‘এটাই আমাদের কাজ, শুধু শুধু বসে থাকা, শুধু শুধু অন্যের হালকা কথা বার্তা শোনা আমাদের কাজ নয়’। এটা আমার মনে দাগ কেটে যায়।

আমি বললাম, ‘এখন আমাদের যেতে কোন সমস্যা নাই, কেননা প্রিন্স চার্লস ইতিমধ্যেই চলে গেছেন’।

মাওলানা বললেন, ‘এগুলো কি এতসব কাসিদা গেয়ে চলেছে, এভাবে সময় নষ্ট করার কি মানে হয়? এসব করতে তোমাকে কে বলেছে? তার চাইতে একটা কলম নিয়ে মুহাম্মাদ (সা) এর নাম লেখা অনেক ভালো, সারা দুনিয়ার জন্য তা যথেষ্ট’।

মাওলানা বললেন, ‘শোন, আমি তোমাকে মুহাম্মাদ তালমেইসানির গল্প বলি। সে ছিলো তালমেইসানের পুরা এলাকার সবচাইতে ধার্মিক এবং সাধু মানুষ। সে যখন রাসুল (সা) কে তার ১০০০০০ দালাইল আল-খাইরাত পাঠের সওয়াব উপহার দিতে গেলো, মনে রেখো, ১ বার নয়, ২ বার নয়, ১ লাখ বার! এক মিনিটের মধ্যে তিনি রাসুল (সা) এর রুহানী উপস্থিতিতে পৌঁছে যান আর তাকে বলেন, ‘আমি আপনার জন্য এক লাখ বার দালাইল আল-খাইরাত পড়েছি’।

ঐ কাহিনীটার কথা আমার মনে পড়ে গেলো কেননা প্রায়ই কিছু মানুষ আসে আর বলে, ‘আমি এক লাখ সালাওয়াত পড়েছি, কি দশ লাখ পড়েছি, যা কিনা তোমার জন্য খুবই উত্তম, যদি তোমরা সঠিক ভাবে পড়তে পারো। এখন মন দিয়ে শোন। ওইরকম না করেও তোমরা ১০ লাখ সালাওয়াতের বরকত পেতে পারো।

তো রাসুল (সা) তাকে তখন কি বললেন? ‘আমি তোমাকে এমন একটা সালাওয়াত শিখিয়ে দেবো যা কিনা দুনিয়া আর আখিরার সকল সালাওয়াতের সমান’। এখন আমি তোমাদের তা শিখিয়ে দিচ্ছি, কেননা এই সালাওয়াত অন্য অনেক সালাওয়াতের চেয়েও উপকারী, এমনকি দালাইল আল-খাইরাতের চেয়েও বেশী। কিন্তু তার চাইতেও বেশী বরকতের কাজ হলো যখন তোমরা ‘মুহাম্মাদ’ এই নামটা বলো, তা অন্য সবকিছুর চাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ যখন আমরা বলি, ‘ইয়া মুহাম্মাদ’, সেটা ওজনে দুনিয়ার অন্য সব কাসিদার চাইতে বেশী, কেননা ওই কাসিদা গুলো লিখেছে অন্য মানুষেরা । আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুন রাসুল’আল্লাহ’ এই দুনিয়ার সব চাইতে বেশী ভারী ও গুরুত্ববহ কেননা সেটা বেহেস্তি লেখা। কাজেই তোমরা তোমাদের সময় নষ্ট করছো, কারণ তোমরা তো প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে। যদিও সালাওয়াত পাঠ করা খুবই উত্তম, যদি তা সঠিক ভাবে পড়া হয়, যেরকমটা করেছিলো মুহাম্মাদ তালমেইসানি।

এর অর্থ হলো এটাই যে, আমরা যদি ‘মুহাম্মাদ’ নামটা মাত্র একবারও বলি, আল্লাহ্‌ সুবহানাহুতা’আলা আমাদের জন্য সমস্ত গোপন রহস্য উন্মুক্ত করে দিবেন যা কিনা দালাইল আল-খাইরাতের ভেতরে আছে। এই দুনিয়ার যে কোন স্থানে যে কেউ তার নাম নিলেই তাকে রুহানীয়তের জগতে উন্নীত করা হয়। কাজেই সাইয়িদিনা মুহাম্মাদ (সা) –এর নাম বেশী বেশী করে নিতে থাকো কেননা তা এই দুনিয়ার অন্য সকল সালাওয়াতের চাইতে ওজনে বেশী।

আর যদি তোমরা ‘আল্লাহ’র নাম নাও, তা তো আল্লাহর অন্য সকল আসমাউল হুসনার ভেতরে আল্লাহর সবচাইতে বেশী পছন্দের নাম। আল্লাহ্‌ যাতে আমাদেরকে সালাওয়াত পড়ার বরকত দেন আর তার ইসমে জালালা ‘আল্লাহ্‌’ বলতে পারার বরকত দেন। শ্রেষ্ঠ জিকির হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কেননা তা শুধু মাত্র আল্লাহ্‌রই জন্য, সবচাইতে বিশুদ্ধতম।

আল্লাহ্‌ যাতে আমাদেরকে এই সুহবাতের বরকত দিয়ে আশীর্বাদ করেন আর সবার জন্য শিফা দেন, আর তোমরাও দোয়া করো যাতে আমি তার শিফা পেতে পারি।

ওয়া মিন আল্লাহি তৌফিক, বি হুরমাতিল হাবীব, বি হুরমাতিল ফাতিহা।

কপিরাইট 2024 sufilive.com

https://sufilive.com/The-Dead-are-Those-Whose-Hearts-are-Dead-6674.html

UA-984942-2