Go to media page

মাওলানা শেখ নাজিম

কিভাবে অসুবিধা আর অশান্তির মোকাবেলা করতে হয়

নভেম্বর ২৬, ২০১০, লেফকে, সাইপ্রাস

আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতোয়ানির রাজিম

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম

একটা দালানকে উপর দিকে দাড়ানোর জন্য তার নিচে ভিত্তির দরকার হয়। যেই দালানের নিচে ভিত্তি নাই সেই দালানে কেউ বাস করতে পারে না। এই ভিত্তিটা কি? কালিমা শাহাদা।

আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আশ হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

এই পবিত্র কালিমা যদি আমরা একশ বার, এক হাজার বার, এক লাখ বারও পড়ি না কেনো, তাতে আমাদের কোন ক্লান্তি হবে না, আমরা পরিস্রান্তও হবো না। এই কালিমা আমাদের ঈমানকে আরো মজবুত করে, আমাদের বিশ্বাসকে আরো সাহস দেয়, শক্তি যোগায়। এই দুনিয়া অসংখ্য সমস্যায় পরিপূর্ণ। এই পৃথিবীটা যদি একটা বাসা হয়, সেই বাসাটা ভর্তি কেবল কঠিন সমস্যা দিয়ে। তারা বলে, 'লা রাহাতা ফি-দুনিয়া'। দুনিয়াতে সহজ আর আরামের কিছু নাই। এখন দেখা যাক, তারা [মাওলানা ইঙ্গিত করছেন আল্লাহ, রাসুল (সা) আর আউলিয়ায়ে কেরামের দিকে] আমাদেরকে দিয়ে এই বিষয়ে আর কি কি বলিয়ে ছাড়ে আজকে।

এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।

এই দুনিয়াতে সহজ কিছুই নাই। এখানে আছে কষ্ট, এখানে আছে সমস্যা। তাহলে এখানে আমরা কিভাবে বেচে থাকবো? এতো সমস্যা আর এতো দুর্বিষহ যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে আমরা তাহলে কিভাবে সফল হবো? আসুন, দেখা যাক।

যে কথা বলছে, তার দিকে না তাকিয়ে যে তাকে দিয়ে কথা বলাচ্ছে তার দিকে মনোযোগ দিন।

আমরা সবাই এই মুহূর্তে এই দুনিয়াতেই আছি, আখিরাতে নয়। এমন কেউ যদি থাকে, যে মনে করে যে এই দুনিয়ায় কষ্ট, দুঃখ আর সমস্যা নাই, তাহলে দয়া করে সামনে আসেন। 'লাআনাল্লাহুল কাদহিবিন', মিথ্যুকদের উপরে আল্লাহর লানত (অভিশাপ)। কেউ বলতে পারবে না যে এই দুনিয়ার জীবন সহজ। আমাদের এই জীবন সমস্যা, দুরূহ যন্ত্রণা আর দুশ্চিন্তা দিয়ে জর্জরিত। এর মাঝেই আমরা বেচে আছি। নিজের ইচ্ছায় আমরা কেউই এখানে আসি নাই। নিজের ইচ্ছায় আমরা এখান থেকে চলে যেতেও পারবো না। এই জীবন আমাদেরকে পুরা করে তবেই যেতে হবে। যখন ঠিক সেই সময় আসে, আমরা ঠিক তখনই চলে যাই। এই জীবনের সমস্ত কিছুর ভেতরেই সমস্যা। এখানে এমন কিছুই নাই যেটাতে সমস্যা নাই। তো তাহলে এই কষ্ট আর অসুবিধা আর অশান্তির সমুদ্র আমরা কিভাবে পার হবো? কিভাবে আমরা এই জীবন কাটাবো নিজেদেরকে বিধ্বস্ত না করে? সেটা আমাদেরকে অবশ্যই শিখতে হবে, জানতে হবে ।

আমরা আগেই বলেছি, একটা দালান বানানোর আগে তার ভিত্তি শক্ত আর কঠিন করতে হয়। আমাদের জীবন যদি আমরা রুহানীয়তের ভিত্তির উপরে নির্মাণ করতে না পারি, তাহলে এই জীবনের দালানটাও কিন্তু নড়বড়ে হবে। কাজেই দৃঢ় এবং শক্তিশালী ভিত্তির জন্য স্পিরিচুয়ালিটির কোন বিকল্প নাই। যার জীবনের দালান ঐ রুহানীয়তের ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত হবে, সে এই দুনিয়ার জীবনের সকল সমস্যাকে সহ্য করতে পারবে অনেক সহজেই।

আমাদের মধ্যে কে আছে যারা সবচেয়ে ভারী বোঝা বহন করে তাদের ঘাড়ের উপরে? নবী, রাসুলেরা। কেননা তারা সরাসরি সবচাইতে নির্বোধ আর সবচাইতে অজ্ঞ মানুষদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন। ঐসব বন্য মানুষগুলা, যারা তাদের নফসের উপাসনা করেছে, নবী রাসুলেরা তাদেরকে লক্ষ করেই তাদের বিরোধিতা করেছিলেন। সেই কারনে পয়গম্বরদেরকে যেই দুরূহ বোঝা বইতে হয়েছে তার তুলনা কোনভাবেই হয় না। কিভাবে সেই ভয়ঙ্কর বোঝা তারা বইতে পারলেন? আশহাদুল বালা আলাল আম্বিয়া। এই দুনিয়ার সবচাইতে কঠিন কষ্ট, অশান্তি আর অপমান তাদেরকেই সহ্য করতে হয়েছিলো, আল্লাহর নবী আর রাসুলদেরকে। তাদের পরে আসে আউলিয়া। তাদের পরে আসে মু'মিন, সত্যিকার বিশ্বাসীরা, তাদের যার যতটুকু ঈমান সেই পরিমান ।

আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যেই বোঝা বহন করতে হয়েছে তা এমনকি অন্য নবীদের জন্যেও ছিলো অসহনীয়। তাহলে তিনি (সা) কিভাবে সেই অসম্ভব কষ্ট সহ্য করলেন, সেই বোঝা বহন করলেন? রুহানী সাহায্য ব্যতীত এই শরীরটা ভেঙ্গে পড়ে, দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়, আর উঠে দাড়াতে পারে না। সাহাবায়ে কেরাম যেই দুঃসহ কষ্ট, যন্ত্রণা আর ব্যাথা সহ্য করেছেন তা চিন্তা করাও কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। চব্বিশ ঘণ্টার একটা দিনের মধ্যে কখনো তারা খাবার পেয়েছেন, কখনো খাবার মতন একটা দানা পানিও পান নাই। হিজাজের মরুভূমির মাঝখানে তাদেরকে কি ধরনের কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিলো? আমরা যখন হজে যাই, অত্যন্ত সাময়িকভাবে ঐ প্রচন্ড গরমের ভেতর আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এমনকি কখনো কখনো আমাদের এতো ক্লান্ত লাগে যে আমরা মনে করি যে, থেমে যাই, আর যাবো না, ফিরে যাই, ঠান্ডা কোনো জায়গায় গিয়ে আরামে একটু প্রান ভরে নিশ্বাস নেই। আমরাতো আমাদের ইচ্ছা মতো সারাদিন খাচ্ছি আর পান করছি। তাহলে কোন সাহসে আমরা তাদের সাথে আমাদের তুলনা করবো আর তাদের সমালোচনা করার মতন ধৃষ্টতা দেখাবো?

ওয়া মিন আল্লাহি তাউফিক। আল্লাহ সুবহানাহুতা’আলা আমাদের জীবনকে সেই রুহানী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার তৌফিক দিন।

বি হুরমাতিল হাবিব (সা),

ওয়া বি হুরমাতিল ফাতিহা

https://sufilive.com/How-to-Face-Difficulty-and-Turmoil-Onscreen-Text--6719.html

© Copyright 2020 Sufilive. All rights reserved. This transcript is protected

by international copyright law. Please attribute Sufilive when sharing it. JazakAllahu khayr.

UA-984942-2