আসসালা-মু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকাতাহু।
দাস্তুর ইয়া- সায়্যিদি, ইয়া আউলিয়া আল মাদাদ, ইয়া মাওলানা শেখ নাজিম (ق) মাদাদ।
ক্বলাল্লাহু তাআলা ফি কিতাবিহিল্ কারি-ম,
أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ
আত্বি-উ-ল্লা-হা ওয়া আত্বি-উ-র্ রসু-লা ওয়া উ-লি-ল্ আমরি মিনকুম।
আল্লাহর আনুগত্য কর, নবীর আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বকারীদের আনুগত্য কর। (সুরা আন নিসা, ৪:৫৯)
আউ-যু বিল্লা-হি মিন আশ্ শাইত্ব-নির্ রাজি-ম। বিসমিল্লা-হির্ রহমা-নির্ রহি-ম।
নাওয়াইতুল্ আরবাই-ন্, নাওয়াইতুল্ ইতিকাফ, নাওয়াইতুল খলওয়াহ্, নাওয়াইতুল্ উয্বলাহ, নাওয়াইতুর্ রিয়া-দাহ্, নাওয়াইতুস্ সুলু-ক্, লিল্লাহি তা’আলা ফি হা-যাল্ মাসজিদ।
আলহামদুলিল্লা-হ, আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল আলামি-ন, ওয়াস্ সালা-তু ওয়াস সালা-ম আলা- আশরাফিল্ মুরসালি-ন্, সায়্যিদিনা- ওয়া নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আ-লিহি ওয়া সহবিহি আজমাই-ন্। নাহমাদুহু তাআলা আলা- নি’অ্তিহি য্ব-হিরা ওয়া বা-তিনান্ ওয়া নাশহাদু ওয়াহ্দা-নিয়্যাতিহ্ ওয়া নাক্বু-ল, আশহাদু আন্ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান্ আবদুহু ওয়া হাবি-বুহু রসু-লুহ্।
আমরা আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলার কাছে দোয়া করি যেন তিনি সবসময় আমাদের হযরত সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং আমাদের শিক্ষক, অভিভাবক, সায়্যিদি ওয়া মাওলানা শেখ নাজিম ق এবং সায়্যিদি ওয়া মাওলানা শেখ আবদুল্লাহ আল-ফায়েজ আদ্-দাগেস্তানি ق এর উপস্থিতিতে রাখেন।
মাওলানার বারাকাসহ আলহামদুলিল্লাহ এবং তাঁর অনুমতির পরে, অবশ্যই, আমি আজ এখানে আপনাদেরকে দেখতে এসেছি; আমাদের ভাই-বোনদের দেখতে এবং মাওলানা শেখের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে সালাম ’আলাইকুম জানাতে।
নবি করিম ﷺ প্রেমের ভিত্তির উপর তাঁর সাহাবাদের (রা.) তৈরি করেছিলেন। তারা সাহাবা হওয়ার আগে, ইসলামের পূর্বে রসুল ﷺ তাঁর সমাজ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন। সুতরাং প্রেমের প্রয়োজন কেননা এটি মানুষেরক হৃদয়কে শুনতে এবং গ্রহণ করতে পরিচালিত করতে পারে। আল্লাহ বলেন, “আতিউল্লাহ, আল্লাহর আনুগত্য কর!” যদি ভালবাসা না থাকে তবে কোনও আনুগত্য নেই কারও গুরুত্ব নেই। আউলিয়া কেন আউলিয়া হলেন? কারণ আল্লাহ তাদেরকে একটি বিশেষত্ব দান করেছেন; তিনি তাদের অন্তরে ভালবাসা দিয়েছিলেন এবং তাদের এগিয়ে এনেছেন এবং তাঁর সুন্দর নাম এবং বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে তাদের সজ্জিত করেছেন। তবে লোকেরা এটিকে হালকাভাবে নেয়।
তবে যাকে পোশাক পরানো হচ্ছে তিনি জানেন যে এটি হালকা কিছু নয়, ভারী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা উদার, যখন তিনি তার সুন্দর নাম এবং বৈশিষ্ট্যগুলির একটি পোশাক দেন যখন তিনি এটিকে মাপকাঠি করে বলেন না যে, “আমি এর চেয়ে বেশি দিতে পারি না।” আল্লাহ যখন দেন তখন তিনি তাঁর অফুরন্ত অনুগ্রহ থেকে দান করেন। আর এটি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে যখন তিনি তার বান্দার জন্য অপেক্ষা করেন আর বান্দা ( সে পোশোকের জন্য) এগিয়ে যায় ও আবেদন জানায়। সেই সময় তিনি তাঁর মালাইকাদের সেই ব্যক্তিকে তার ঐশী সুন্দর নাম এবং বৈশিষ্ট্য দিয়ে সজ্জিত করার আদেশ দেন। বহুবার আমরা পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি পড়েছি এবং আজ পর্যন্ত প্রতিটি বক্তা এবং প্রত্যেক আলেম বা পণ্ডিত সর্বদা এর উল্লেখ করেছেন, আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্ এ আয়াতটিকে এতটা দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে যে তারা প্রত্যেকটি খুতবা, প্রতিটি সভা, প্রতিটি মাওলিদ বা মিলাদে, বা অন্য কোনও উদযাপনে উল্লেখ করে থাকেন । আমরা পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি উল্লেখ করেছি কারণ এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দেখায় যে আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবিকে (ﷺ) কতটা ভালোবাসেন।
খুৎবাত আল-জুমু’আতে যে-কেউ এ আয়াতটি না বললে তা বাতিলাহ বলতে পারবেন না, তবে আমরা বলি এটি সম্পূর্ণ নয়। এবং এই আয়াতটি হ’ল:
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
ইন্নাল্লাহা ওয়া মালা-ইকাতাহু ইউসল্লু-না আলা- ন্নাবি-, ইয়া- আইয়্যুহাল্ লাজি-না আ-মানু- সল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমু- তাসলিমা-
নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবির প্রশংসা প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তাঁর প্রতি দোয়া করুন ও সালাম দিন। ( সুরা আল-আহযাব, ৩৩:৫৬)
এখন আসুন আমাদের আমাদের সামর্থ্য এবং বোধগম্যতা অনুসারে, মহানবি ﷺ-এর প্রতি আল্লাহ কতটা ভালবাসা প্রদর্শন করছেন দেখি। আমাদের বোধগম্যতা এমনকি একটি যাররা, পরমাণু বা সেই ভালবাসার একটি ফোঁটাও নয়, তবে আমরা সেই ফোঁটি বর্ণনা করার চেষ্টা করছি। এটি এমন একটি মহাসাগর যাতে কেউ প্রবেশ করতে পারে না, এমনকি সুলতান আল-আউলিয়াও না। সমস্ত আউলিয়ার জ্ঞান একটি ফোঁটার মত। আল্লাহ বলছেন, “ইন্নাল্লাহা ওয়া মালা-ইকাতাহু ইউসল্লু-না- আলা-ন্ নাবি,” নিশ্চিত করে বলছেন, “আমি ভালবাসি।” সুতরাং আমাদের ব্যাখ্যাটি একটি সমুদ্রের ফোঁটার মতো এবং এটি কেবল এটি দেখানোর জন্য যে, যখন কারও ভালবাসা থাকে, তখন এটি এত শক্তিশালী হয় যে তা বর্ণনার বাইরে।
সুতরাং আল্লাহ বলছেন, “ইন্নাল্লাহা ওয়া মালা-ইকাতাহু ইউসল্লু-না- আলা-ন্ নাবি,” ফি- হক্ব্ আন্ নাবি! “আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ সালাওয়াত করেন।” “আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ” থেকে আপনি কী বোঝেন? প্রথমত, কেউ যখন কোনও সম্পত্তি কিনে, লোকেরা এর আয়তন জানতে চায়, এটি কতটা ধারণ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ম্যানচেস্টার স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৮০ থেকে ১০০ হাজার মানুষের রয়েছে; তবে এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের সীমাবদ্ধ করেন নি, যখন তিনি “ইন্নাল্লাহা ওয়া মালা-ইকাতাহু ইউসল্লু-না- আলা-ন্ নাবি,” বলেছেন। তিনি যখন আসহাবে বদরের সমর্থনে ফেরেশতাদের প্রেরণ করলেন, তখন তিনি একটি সংখ্যা দিলেন; ৩০০০ ফেরেশতা কুফর দূর করার জন্য যথেষ্ট ছিল।
তবে এই আয়াতে আল্লাহ কোন সীমা দেখান না, আমরা এক মিলিয়ন বা আরও বেশি বলতে পারি, এটি সীমাহীন। আমরা এটিকে একটি নম্বর দিতে পারি না, কীভাবে পারি? যদি আমরা তা করি তবে আমরা তাঁর সৃষ্টিতে আল্লাহর শক্তি হ্রাস করছি। আমি আপনার চেয়ে অনেক বড় সংখ্যা বুঝতে পারি; ট্রিলিয়ন, কোয়াড্রিলিয়ন, কুইন্টিলিয়ন ইত্যাদি। প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতা সৃষ্টি করছেন কারণ সৃষ্টি থামতে পারে না, ‘আল্ খ-লিক্ব’ ধারাবাহিকভাবে সৃষ্টি করছেন। যদি আমরা বলি এটি বন্ধ হয়ে যায় তবে আমরা আল্লাহ তা’আলাকে প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছি না।
আমরা যখন “আল্লাহু আকবার” বলি তখন এর অর্থ, আপনি যা ভাবেন আল্লাহ তার চেয়ে মহান বা বড়। তাহলে কে ভাবতে এবং সেরা উপায়ে শিখতে পারে? নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তবুও আমরা বলি “আল্লাহু আকবর!” মহানবি ﷺ উচ্চ স্তরের জ্ঞান সম্পর্কে যা জানেন, আল্লাহ তার চাইতে বেশি। নবি করিম ﷺ বান্দা বা সৃষ্টি, আল্লাহ স্রষ্টা। আল্লাহর নাম ‘আল খ-লিক,’ ‘স্রষ্টা’। এর অর্থ হলো এক সেকেন্ডের প্রতিটি ভগ্নাংশেও সৃষ্টি রয়েছে।
সায়্যিদিনা খিজির (আ.) জিবরাইলকে (আ.) জিজ্ঞাসা করার গল্পটি গ্র্যান্ডশেখ ق সবসময় পুনরাবৃত্তি করতেন। সায়্যিদিনা খিজির (আ.) জিবরাইলকে (আ.) জিজ্ঞাসা করলেন,“আপনি কি আমাকে বলতে পারবেন যে আল্লাহ তা’আলা আদমকে কখন সৃষ্টি করেছিলেন?”
জিবরাইল (ক) উত্তর দিয়েছিলেন, “আপনি কোন ‘আদম’ নিয়ে কথা বলছেন?”
“আরও কোনও ‘আদম’ আছেন?” খিজির (আ.) জিজ্ঞাসা করলেন।
জিবরাইল (আ.) জবাব দিলেন, “যেহেতু ১২৪,০০০ ‘আদম’ রয়েছেন এবং সায়্যিদিনা মুহাম্মাদ (ﷺ) তাদের সকলের জন্যই নবি। আল্লাহ তাদের (আদম সন্তানদের) বিচার করেছেন এবং তাদের জান্নাত বা জাহান্নামে প্রেরণ করেছেন এবং এই ‘আদম’ সর্বশেষজন।”
সুতরাং আমরা যে কিছু না তা দেখাতে আমাদের মাথা সিজদায় রাখার পক্ষে ‘আল-খ-লিক্ব্’ই যথেষ্ট। যারা নিজেকে কিছু হিসাবে বিবেচনা করে তাদের সকলকেই জানতে হবে যে তারা কিছুই নয়। আপনার অহংকে উৎসাহিত করবেন না এবং প্রশংসা করবেন না, আপনি যদি প্রশংসা করেন তবে হেরে যাবেন। সায়্যিদিনা মুহাম্মদ (ﷺ) বলেছেন, “হে আল্লাহ, আমাকে চোখের পলকের জন্য আমার অহংকারের কাছে ছেড়ে দেবেন না, নইলে আমি ‘আল-খতিমা’য় যাব, আমার খারাপ পরিণতি হবে।”
এ কারণেই বলা আমাদের অনুচিত যে, “আমরা কোথায় বসব?” আমাদের সোফা পেলে ঠিক আছে, নইলে মেঝেতে বসুন। তবে আমাদের নিজেদেরকে বলতে হবে, “তুমি মসজিদের দরোজায় থাকার চেয়ে বেশি যোগ্য নও,” আপনাকে অবশ্যই নিজের অহংকে পুরোপুরি নীচে নামিয়ে আনতে হবে। এ কারণেই আল্লাহ রসুল প্রেরণ করেছেন এবং আউলিয়া ও সুলতান আল-আউলিয়াকে তাদের উত্তরসুরী করেছেন যেন তারা উম্মাহকে সুশৃঙ্খল হতে পথ দেখান এই বলে যে, “তোমরা যা ভাবছ তা সঠিক নয়; না! তোমাদের নফস লোভী, কৃপণ, হুল ফোটানো স্বভাবের, খ্যাপা। সুতরাং, সমস্ত ধরণের খারাপ আচরণ আমাদের মধ্যে পাওয়া যায়। আমরা বলতে পারি না আমরা নিখুঁত; অবশ্য অনেক লোক তারা ভাবেন যে তারা তেমনি। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন:
وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ
ওয়া ফাওক্বা কুল্লি যিল ’ইলমিন ’আলিম
আর সকল জ্ঞানীর উপর রয়েছে একজন (অধিক) জ্ঞানী। (সুরা ইউসুফ, ১২:৭৬)
সিলিংটি দেখুন, আপনার মাথা তো তার উপরে নয়। নফস থেকে শয়তান মানুষকে ময়ূরের মতো করে তোলে। তারা ইবলিসের উত্তরাধিকারী, কারণ সেই প্রথম অভিযোগ করেছিল। সে আল্লাহ তা’আলাকে বলেছিল:
قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ
ক্ব-লা আনা- খইরুম্ মিনহু খ্বলাক্বতানি- মিন্ না-রিন্ ওয়া খ্বলাক্বতাহু মিন ত্বি-ন্
(ইবলিশ) বলল্ “আমি তার চাইতে উত্তম যেহেতু আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদা থেকে!” (সাদ, ৩৮: ৭৬)
সে এই কথা কেমন করে বলতে পারে? আল্লাহ কি আরও ভাল জানেন না? সুতরাং অহং (ইগো) তা মেনে নিতে পারে না, আমাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ চরিত্রটি হলো আমাদের দেহের মধ্যে থাকা “স্ব” বা “আত্ম” বা “অহং” বা “নফস”, যা মানবতার মুখোমুখি হচ্ছে। আমরা লড়াই করি কেন? আমাদের অহংকে এ কথা বলার জন্য যে, “আমি তার চেয়ে ভাল।” যদি আপনি আরও ভাল হতে চান তো সেই সাহাবা যেমন করেছেন তাই করুন; যাঁর জন্য নবি ﷺ বলেছেন, “এই ব্যক্তি জান্নাতে যাবে।” সায়্যিদিনা উমর (রা.) তখন জানতে চেয়েছিলেন যে তিনি (ঐ সাহাবি) কী করেন, তাই তিনি তাঁর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলেন। যথাযথ আদব হলো কোনও অতিথিকে আতিথ্য দিতে হয় তিন দিনের জন্য তবে অতিথি কোনও প্রশ্ন করবে না। অতিথি আসার সাথে সাথে অতিথিকে তিন দিনের জন্য একটি বিছানা এবং খাবার দেবে। এবং যদি তিন দিন পরেও অতিথি চলে না যান, তবে গৃহকর্তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, “আমি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি,” আমরা কি তা করি?
এই সাহাবি নবি ﷺ এর পিছনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, এর চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। সায়্যিদিনা উমর (রা.) সালাতুত তাসবিহ, ইশরাক এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছিলেন। “আমি তার চেয়ে বেশি করে যাচ্ছি,” উমর (রা.) ভেবেছিলেন। সাহাবি তিন দিন কিছু বললেন না, তিন দিন শেষে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া উমর, আমি কি আপনার কোনও খেদমত করতে পারি?”
উমর (রা.) বললেন, “জ্বি। নবি করিম ﷺ বলেছেন যে আপনি জান্নাতে যাচ্ছেন, তবে আমি আমার চেয়ে বেশি কিছু করতে তো আপনাকে দেখছি না, তাহলে আপনি এমন কী করছেন?”
তিনি বললেন, “ইয়া উমর, আমি ঘুমানোর আগে আমার শাহাদাকে তিনবার নতুন করে বলি।” আমরা কি তা করি? আমরা এটা এক দিনের জন্য করতে পারি, তারপরে পরবর্তী পাঁচ দিন ভুলেও যেতে পারি। তিনি বলতে লাগলেন, “তারপরে আমি সকালে কাজ করতে যাই এবং যদি দুনিয়া আমার কাছে আসে তবুও আমি তার দিকে তাকাই না। আল্লাহ বলেছেন, পুরো দুনিয়া তাঁর কাছে এমনকি একটি মশার পাখার সমান না, তাহলে আমাকে কেন খুশি হতে হবে?”
আজ যদি আমরা দুনিয়া থেকে কিছু পাই তবে আমরা খুব খুশি হয়ে যাই। কিছু লোকের কাছে বিশাল গাড়ি রয়েছে, তারা সেটা অন্যদের দেখাতে পার্ক করে, “দেখ আমার কাছে কী আছে!”
সাহাবি বলে যাচ্ছিলেন, “এবং সন্ধ্যা হলে পুরো দুনিয়া যদি চলেও যায়, আমি কিছু মনে করি না। এবং অবশেষে, আমি যখন বিছানায় যাই তখন আমি নবি ﷺ এর উপর একশবার দুরুদ পড়ি আর বলি, ‘ইয়া রাব্বি! যে ফিতনা তৈরি করেছে, গোপনে শত্রুতা করেছে, আমাকে কষ্ট দিয়েছে বা দুঃখ দিয়েছে, আমি সেগুলি আমার হৃদয় থেকে ক্ষমা করে দিচ্ছি।”
সায়্যিদিনা উমর (রা.) বললেন, “সাদাক্বা ইয়া- রসু-লুল্লাহ্, আমরা তা করি না!”
সুতরাং সমস্যাটি আমাদের নফসের। রসুলুল্লাহ ﷺ কে তাদের বলতে বলা হয়েছিল:
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
ক্বুল ইন্নামা- আনা- বাশারুম্ মিথলুকুম্ ইউ-হা- ইলাইয়্যা আন্নামা- ইলা-হুকুম ইলা-হুন্ ওয়া-হিদুন্ ফামান্ কা-না ইয়ারজু- লিক্বা- রব্বিহি ফাল্ ইয়া’অ্মাল আমালান্ স-লিহান ওয়া লা- ইয়ুশরিক বিইবা-দাতি রব্বিহি আহাদা।
বলুন: আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। (আল কাহাফ, ১৮: ১১০)
যারা বোঝে না তারা বলে, “তিনি কেবল বার্তা নিয়ে এসেছিলেন এবং আর কিছুই করেন নি।” তবে আল্লাহ চান আপনি এমন একটি শিক্ষা গ্রহণ করুন যে, “আমি, মুহাম্মদ, যাকে আল্লাহ কাবা কাওসাইনি ওয়া আদনা” পর্যন্ত উন্নীত করে সম্মানিত করেছেন, তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি যে, আমি নিজেকে নতজানু বা বিনত করছি। আমাদের জন্য সে বিনয় ও নম্রতা শেখা বাধ্যতামূলক কারণ যদি আমরা অহংকার দেখাই তো তাহলে আমরা ইবলিসকে অনুসরণ করলাম।
فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا
ফা আলহামাহা- ফুজু-রাহা- ওয়া তাক্বওয়া-হা-
তিনি তাতে (আত্মায়) আবেগ সঞ্চার করেছেন কল্যাণকর ও মন্দ কাজের। (আশ্ শামস্, ৯১:৮)
আল্লাহ পছন্দ করেন আমরা যেন নম্রতা প্রদর্শন করি। যখন তিনি নবি ﷺ এর নূর তৈরি করেছিলেন, সেই সময় থেকেই তিনি ফেরেশতাদেরকে বিরতিহীনভাবে নবি ﷺ এর উপর সালাওয়াত পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সুতরাং এখন আমরা বলি, “আল্লাহুমা সাল্লাল্লাহু আলাইহি সায়্যিদিনা মুহাম্মাদ,” কিন্তু আপনি কি মনে করেন যে ফেরেশতারা প্রতিবার একই সালাওয়াত পড়েন? যতবার তারা সালাওয়াত পড়েন, দ্বিতীয়টি প্রথমটির চেয়ে আলাদা, তৃতীয়টি চতুর্থটি থেকে আলাদা হতে হবে ইত্যাদি। তারা প্রতিনিয়ত নবি ﷺ-এর উপর অগণিত সালাওয়াত পড়ছেন এবং প্রতিবারই বিভিন্ন শব্দের সাহায্যে (এতে পুনরাবৃত্তি নেই)। আল্লাহর ফটোকপি মেশিনের দরকার নেই, যদি আপনি এমনটি মনে করেন তবে আপনি তাঁর মাহাত্ম্য হ্রাস করছেন।
সুতরাং প্রতিবার সালাওয়াত আলাদা হয়। আল্লাহ তা’আলা উচ্চারিত প্রতিটি সালওয়াত থেকে একজন করে ফেরেশতা তৈরি করেন। সুতরাং, এসব এমন কিছু যা আমাদের ধারণার বাইরে। আপনি কি ভাবেন যে, আয়াতের কোনও ওজন নেই? উদাহরণস্বরূপ, একটি স্বর্ণকার তার বাটখাড়াতে সবকিছুই মাপতে পারেন, এমনকি একটি চুলও। নবি করিম ﷺ এর উপর একটি সালাওয়াত পুরো ‘উম্মত আন-নবি’কে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। কেন? কারণ আল্লাহ বলেছেন:
মান সল্লা আলাইহি মাররাতান্ ইয়ুসল্লি আলাইহি আসহার
মানুষের পড়া একটি সালাওয়াতের জন্য আল্লাহ তাদের দশবার পুরস্কৃত করবেন।
আপনি কি এটিকে আমাদের মতো মনে করেন? না! প্রতিটি সালাওয়াতের জন্য আল্লাহ আপনাকে সজ্জিত করেন এবং এমন পুরষ্কার দেন যা আপনার উপলব্ধির বাইরে; এটা একটি রংধনুর মতো, আপনাকে বিভিন্ন রঙের পোশাক পরানো। এজন্যই আল্লাহ তা’আলা চান যে আপনি যেন সেই সালাওয়াতের মূল্য বুঝতে পারেন, তিনি চান যে আপনি বেহেশতি বাগানে আসেন, তাই তিনি আসলে বলেন, “তুমি কি ভিতরে আসতে চাও? তাহলে তাকে সম্মান জানাতে সালাওয়াত পড়।”
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ
ওয়া লাক্বাদ কাররামনা- বানি- আ-দামা
এবং নিশ্চয়ই আমরা আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি। (আল ইসরা, ১৭:৭০)
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তাঁর নবি ﷺ কে ভালবাসেন তাই তিনি চান যে আমরাও তাকে ভালবাসি এবং আমাদের কাছে যা প্রিয় তা তাকে দিন। আপনি যদি প্রিয় জিনিসটি না দেন তবে তা উচ্চ মানের নয়। সাহাবা (রা.)রা রসুলুল্লাহ ﷺ কে যেমন দিয়েছিলেন, আপনাকেও তেমনি করে দিতে হবে। তিনি ﷺ বলেছিলেন, “আমার সাথে এসো,” তারা আমাদের কাছে ইসলাম পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ধরণের অসুবিধা ভোগ করেছিলেন। সুতরাং এই কথাটি বলবেন না যে, “আমি এখানে এসে আমার সময় নষ্ট করছি,” আপনি যদি চার ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে এসে থাকেন, তো আমিও আপনাদের সাথে বসে কথা বলতে ও আপনাদের কিছু দিতে জন্য অনেক দূর থেকে এসেছি। আত্ ত্বরিক্বাহ কুল্লুহা- আ-দা-ব, “যদি আদব না থাকে, শৃঙ্খলা না থাকে, আপনি তার গণ্ধ পাবেন। তরিকা পুরোটাই শৃঙ্খলা।”
ادبني ربي فأحسن تأديبي
আদাবানি রব্বি- ফা আহসানা তা-’দি-বি-
আল্লাহ আমাকে শিখিয়েছেন ও শৃঙ্খলাবদ্ধ করেছেন এবং আমার আচরণ পরিশুদ্ধ করেছেন।
وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ
ওয়া ইন্নাকা লাআলা- খুলুক্বিন আয্বিম-ম।
নিশ্চয়ই আপনি সবচেয়ে মহিমান্বিত চরিত্রের অধিকারী। (আল-ক্বলম, ৬৮:৪)
وَمَن كَانَ فِي هَـذِهِ أَعْمَى فَهُوَ فِي الآخِرَةِ أَعْمَى وَأَضَلُّ سَبِيل
ওয়া মান কা-না ফি- হাযিহি আঅ্মা- ফাহুয়া ফি-ল্ আ-খিরাতি আঅ্মা- ওয়া আদ্বাল্লু সাবি-লা।
যে ব্যক্তি ইহকালে অন্ধ ছিল, সে পরকালেও অন্ধ ও অধিকতর পথভ্রান্ত। (আল-ইসরা, ১৭:৭২)
আর সবচেয়ে খারাপ কথা হলো এটা বলা যে, “আমি সংযুক্ত”। শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা ছাড়া কেউ সংযুক্ত থাকে না। সংযুক্ত হওয়ার অর্থ হলো আপনি একটি চুম্বকের মতো এবং যেকোনও কিছুই আটকে ফেলবেন বা ধরে ফেলবেন; অথবা পাইপের মতো, যার মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে। তবে পাইপটি নষ্ট হয়ে গেলে, আপনাকে এটি ঠিক করতে হবে। সংযোগটি সস্তা নয়; একজন প্লাম্বার অনেক টাকা দাবি করে থাকেন। তিনি কেবল একটি পাইপ ইনস্টল করতেই ১০০ ডলার চাইবেন। আপনার শরীরে কতগুলি পাইপ রয়েছে, বিশেষত অন্ত্র বা অন্যান্য অঙ্গগুলির মধ্যে খুব ছোট ছোট চুলের মতো সূক্ষ্ম কৈশিকনালী আছে। কিডনিতেই শুধু এক মিলিয়ন ছিদ্র থাকে; সেগুলো সমস্ত ভাল তরল শোষণ করে এবং আপনার প্রয়োজন নেই এমন খারাপ খনিজ ফেলে দেয় এবং এটি উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে আপনার সমস্ত কৈশিকনালীগুলি যা কয়েকশো বা হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, রক্ত ছাড়াই শুকিয়ে যায়, এতে আপনি মারা যেতে পারেন। যদি আউলিয়া আপনাকে এই সমস্ত কিছুর সাথে সংযুক্ত না করেন এবং আপনাকে ঐশী প্লাগ দিয়ে যুক্ত না করেন, তবে আপনি বাঁচতে পারবেন না। এ কথা বলবেন না যে, “আমি কিছু”; আপনি কিছুই নন, কারণ কেবল আউলিয়াই এ কথা বলতে সক্ষম, আপনি নন।
আমি আপনাদেরকে একটি গল্প বলব যা মাওলানা শেখ সবসময় বলে থাকেন, এটি সায়্যিদিনা আবু ইয়াজিদ আল-বিস্তামি ق সম্পর্কে। তিনি সবসময় দুআ করতেন, “ইয়া রাব্বি, আমার জন্য আপনার দরজাটি খুলুন, আমি প্রবেশ করতে চাই!”
একদিন তিনি একটি কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন, “ইয়া আবা ইয়াজিদ, তুমি বিশেষ কিছু চাইছ এবং এটি সহজেই আসতে পারে না। তুমি কি আমার দরজা চাও?”
“হ্যাঁ!” বলে তিনি জেগে উঠলেন!
আল্লাহ তা’আলা তার হৃদয়ে অনুপ্রেরণা প্রেরণ করলেন, “তুমি যদি আমার ঐশী উপস্থিতিতে আসতে চাও তবে সমস্যা নেই, তবে তোমাকে একটি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। আমি তোমাকে পরীক্ষা করব।”
“ঠিক আছে, আমি প্রস্তুত,” তিনি জবাব দিলেন।
ফেরেশতা তখন এই বার্তাটি নিয়ে এলেন, “যাও আমার বান্দাদের জন্য আস্তাকুঁড় হয়ে ওঠো।”
আস্তাকুঁড় কী? এটি এমন এক জায়গা যেখানে লোকেরা তাদের আবর্জনা ফেলে। আপনি যখন সেই স্তরে পৌঁছে যান এবং আপনার সম্প্রদায়ের জন্য আস্তাকুঁড় হয়ে যান, তখন সেই সময় আপনাকে পরীক্ষা করা হবে। কে আস্তাকুঁড় হতে চায়? এর অর্থ হলো আত্মসমর্পণ, মাথা না তোলা। কতজন তথাকথিত ‘শেখ’ (তা করেন)?
আমি একটি বড় সম্মেলনের জন্য একটি দেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছি। সারা বিশ্বের মন্ত্রীরা এবং সংসদ সদস্যরা এতে অংশ নেবেন। এটি ‘আল-মুলতাকা’ল্ ’আলামি লিত্-তাসাউফ, সুফীদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ হিসাবে পরিচিত। এই বৈঠকটি ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি উদ্বোধন করবেন। আমি সম্প্রতি সেখান থেকে ঘুরে এসেছিলাম বলে আমি যেতে চাই নি। আমি তাদের বলেছিলাম, “আমি আপনাকে জানাব।” আমি মাওলানাকে জিজ্ঞাসা করলাম এবং তিনি বললেন, “তুমি যাও এবং তাদেরকে ইজাযাহ দাও।”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “মাওলানা, আমি কীভাবে তাদের ইজাযাহ, বায়াহ্ দেব?”
...
তিনি বলেছিলেন, “এখন কারও ঐশী শক্তি নেই, এটি শুধু আমাদের কাছে আসছে।” (অর্থ হলো, তাঁর কাছে)।
তিনি জবাব দিলেন, “যাও এবং দেখবে,” তাই আমি যাচ্ছি।
আল্লাহ সায়্যিদিনা আবু ইয়াজিদ আল-বিস্তামি ق কে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন, “মানুষের জন্য আস্তাকুঁড় হয়ে ওঠো,” তাই লোকজনের জন্য তাকে কিছু তৈরি করতে হয়েছিল যাতে তারা তোকে গর্তে ফেলে দেয়। সুতরাং তিনি একটি মসজিদে ঢুকলেন এবং লোকেরা যাতে তাকে আস্তাকুঁড়ে পরিণত করে সেজন্য একটি পরিস্থিতি তৈরি করলেন। তিনি বললেন, “হে মুসলমানগণ! আলহামদুলিল্লাহ তোমরা নামাজ শেষ করেছ।” তিনি জানতেন যে তাদের নামাজ সঠিক ছিল, তবুও তাদেরকে এবং নিজেকেও পরীক্ষা করার জন্য তিনি বললেন, “তোমরা সাজদাটিকে ভুল জায়গায় করেছ। এটা ভুল ছিল, তোমারা আমাকে সাজদা কর।” লোকজন তাকে মারধর করে শহরের একটা গর্তে ফেলে দিল। গ্র্যান্ডশেখ ق বলেছিলেন, “সাত দিন তিনি অজ্ঞান ছিলেন, দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন, তবে তিনি আখিরার সাথে সংযুক্ত ছিলেন।” সাত দিন ধরে তিনি খাবারের সন্ধান করছিলেন এবং একটি হাড় পেলেন। তিনি সেটাতে কামড় দেওয়ার সময় কিছু কুকুর এসে বলল, “এটা আমাদের অঞ্চল, আপনি দখল করতে চাচ্ছেন?” তিনি তাদের ভাষায় বলেছিলেন, “তোমরা এ দিকে যাও, আমি অন্যদিকে থাকব।” আল্লাহ তাকে কুকুর কী বলছে তা বোঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “এই শিশুরা আমি মরে গেছি ভেবে আমাকে এই আস্তাকুঁড়ে ফেলে গেছে! ইয়া রাব্বি! তাদের ক্ষমা করুন এবং তারা যদি আমাকে আবার হত্যা করে আপনি আমাকে আবার সৃষ্টি করুন এবং আবার তাদের ক্ষমা করুন।” এটি আল্লাহ তা’আলার প্রতি আসল ভালবাসা!
আজ আমাদের ভালবাসা কোথায়? একে অপরের প্রতি ভালবাসা আর নেই। সাধারণভাবে ভালোত্বের আর অস্তিত্ব নেই। আমরা ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করি, “এই লোক এটা করেছে, ওই লোক সেটা করে,” এসব আর শেষ হয় না। আমি সেই গল্পটি এনেছিলাম এমন একটি উদাহরণ দেওয়ার জন্য যে, আল্লাহ তার নিকটবর্তী, মরিফাতুল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার দরজা আবু ইয়াজিদ আল বিস্তামির (ق) জন্য খুলে দিয়েছিলেন, যতক্ষণ না তিনি আরও কিছু না করেন, একটি বড় বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করেন। আমরা এখন সেটার কথা বলব না। কিন্তু সেজন্য লোকেরা তার মাথা কাটানোর জন্য তাকে বাদশাহর কাছে নিয়ে গিয়েছিল। সেজন্য তাকে মরুভূমির মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তারা তাকে উটে চড়ায় নি, শেকলে বাধাঁ অবস্থায় পায়ে হেটে রাজার কাছে যেতে বাধ্য করেছিল। আউলিয়ারা কতগুলি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যান, তা দেখুন!
তিনি সাত দিন ধরে মরুভূমির উপর দিয়ে শিকলপরা অবস্থায় হাঁটার পরে বাদশাহ হারুন আর-রাশিদ (র.) নবি ﷺ কে স্বপ্নে দেখেন। রসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, “ইয়া হারুন! আমার এক আউলিয়া ও বংশধর তোমার কাছে আসছে। যাও, তার সাথে দেখা। সে আমার এক আওলাদ, তাঁর সাথে দেখা কর।” তিনি ঘুমাতে গেলেন, একই স্বপ্ন দেখলেন।
তাত্ক্ষণিকভাবে, হারুন আর-রশিদ তাকে নিয়ে আসতে তাঁর সেনাবাহিনীকে আদেশ দিলেন। তারা আবা ইয়াজিদকে (ق) এনে সঙ্গে সঙ্গে তার পা ধুয়ে ফেলল। হারুন আর-রশীদ তার ঘোড়া থেকে নেমে পড়লেন, দুপাশের সৈন্যদের থামালেন, তারপরে সায়্যিদিনা বায়েজিদ আল-বিস্তামির (ق) পা ধুয়ে তাকে ঘোড়ায় চড়ালেন এবং যদিও তিনি বাদশাহ ছিলেন, তিনি তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেন যতক্ষণ না তারা প্রাসাদে পৌঁছালেন। তিনি তার কাছে ক্ষমা চেয়ে তাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন।
মধ্যরাতে প্রাসাদের দরজায় জোরে কড়া নাড়ার শব্দ হলো। সেখানে প্রচুর ভীড় ছিল এবং বাদশাহ জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কারা?”
“আমরা আবা ইয়াজিদের শিক্ষার্থী এবং আমরা জানতে চাই যে তিনি কোথায় আছেন।” তারা কীভাবে জানতে পারল? কেউই জানত না যে সৈন্যরা তাকে নিয়ে এসেছিল।
তারা বলেছিল, “যেখানেই আউলিয়া আসেন সেখানেই আলো থাকে। আমরা সেই আলোটি এই বাড়ি পর্যন্ত অনুসরণ করে এসেছি এবং তাই আমরা এখানে এলাম।”
সুতরাং আদব এবং ভালবাসা মানুষকে আনছে; এটি তার অনুসারীদের একটি চুম্বকের মতো টান দেয়। এ কারণেই আউলিয়ারা তাদের অনুগামীদের সেই আলো বা নূরের মাধ্যমে টানেন যা তারা তাদের হৃদয়ে পাঠান। তার আলো আপনাকে না তার দিকে না আকর্ষণ করলে কেউই তার শেখের কাছে যাবে না। এবং এ কারণে, এই স্বর্গীয় ভালবাসা প্রত্যেকের অন্তরে থাকে বলে তারা তারিকাহ এবং শেখ গ্রহণ করে। এবং আমরা শেখ নাজিম আল হাক্কানীকে (ق) কে আমাদের শেখ হিসাবে গ্রহণ করেছি!
ওয়া মিনাল্লাহিত্ তাওফি-ক্,ইব হুরমাত্ আল হাবিব, বি হুরমাত আল-ফাতিহাহ।
আল্লাহ তা’আলা আপনাদের রক্ষা করুন এবং আমাদের শেখকে খুশি রাখুন।
সূত্র: সুফি লাইভ।
https://sufilive.com/Love-Is-the-Foundation-of-the-Community-3604.html
© Copyright 2020 Sufilive. All rights reserved. This transcript is protected
by international copyright law. Please attribute Sufilive when sharing it. JazakAllahu khayr.